Type Here to Get Search Results !

‘নারী দিবস আবার কী, কাজ না করলে একগ্লাস পানিও জোটে না’

চিলাহাটি ওয়েব ডেস্ক : বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে ডোমার উপজেলার হরিনচড়া ইউপির শেওটগাড়ী এলাকার ঝলমলি রানী (৮০)।
এ বয়সেও প্রতিদিন কাজ করতে হয় তাকে। কাজ করে যা পান তাই দিয়ে ওষুধ কিনতে হয় তাকে। বাকি টাকা দেন ছেলের হাতে। এই বয়সে কাজ করছেন কেন প্রশ্ন করলেই বলেন, যতদিন কাজ করতে পারব ততদিন কাজ করে যাব। ছেলের সংসারে কিছুটা সাহায্য আর কী! যখন কাজ করতে পারব না, তখন ছেলে দেখবে বলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। নারী দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন সেটা আবার কী! 
তিনি বলেন, কাজ করলে টাকা পাই। কাজ না করলে কেউ টাকা দেয় না। ওইসব দিবস আমাদের কোনো কাজে আসে না। ঝলমলির মতো অনেক নারী শ্রমিক জানেই না নারী দিবস কী।
দিনমজুর নারীরা শুধু জানে কাজ না করলে কেউ টাকা দেবে না। আর টাকা না পেলে তাদের না খেয়েই থাকতে হবে। তারা শুধু জানে কাজ করলে টাকা পাওয়া যাবে, কাজ না করলে টাকা পাওয়া যাবে না। অথচ প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশেও নারী দিবস পালিত হয় জাকজমকভাবে। কিন্তু নারী দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন নয় এখানকার শ্রমজীবী নারীরা।
ডোমার উপজেলার সোনরায় বাজারে আলু বাছাই করতে শ্রম বিক্রি করতে এসেছেন দুই সন্তানের জননী লাইলী বেগম (৩৫)। আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোনো দিবস বুঝি না। অভাবের তাড়নায় সংসার চালানোর জন্য কাজ করতে এসেছি। কোনো কোনো সময় ঈদের দিনও কাজ করতে হয়।  তিনি বলেন, আমরা পুরুষের সমান কাজ করি। কিন্তু আমাদের বেতন তাদের মতো দেয় না। পুরুষের মতো বেতন পেলে আমাদের কোনো সমস্যা থাকত না। লাইলীর মতো প্রায় শতাধিক নারী কাজ করছেন আলু বাছাইয়ের বিভিন্ন সেটে।  তারা প্রতিদিন ভোরে রান্নাসহ বাসার সব কাজ সেরে সকাল ৭টার মধ্যে বেরিয়ে পড়েন।  কোনো কোনো দিন কাজ না পেয়ে খালি হাতে বাসায় ফিরতে হয় অনেক নারীকে।
নারী শ্রমিক ঘুনুবালা (৬৭) চিলাহাটি ওয়েবকে বলেন- আপনাদের মাধ্যমেই শুনি প্রতিবছর নারী দিবস পালন করা হয়। তবে আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। কাজ করলে এক গ্লাস পানিও কপালে জুটে না। বিদ্রোহী কবি নজরুল বলেছেন, বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। তারপরও নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। শুধু ঝলমলি রানী না এরকম হাজারো ঝলমলি প্রতিদিন দুমুঠো খাবারের আশায় প্রতিদিনই কাজ করছে ক্ষেতখামারে।
মমিনা নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করলেও মজুরি কম পাই। পুরুষ শ্রমিকরা ৫ শত টাকা পেলেও আমরা পাই ২৫০ থেকে ৩০০  টাকা।বাবলি বেগম নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, নারী দিবস কী আমরা জানি না। এই দিবস আমাদের কোনো উপকারে আসে না। নারী দিবসেও আমরা কাজ করি। আর কাজ না করলে আমরা খাব কী!
ঘুনুবালা (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নারী বলেন, বিয়ের তিন বছরের মাথায় দুই সন্তান রেখে স্বামী মারা যায়। কয়েক বছর পরেই দুই সন্তানও মারা যায়। শেওটগাড়ীতে ভাইয়ের বাসায় থাকি। প্রতিদিনই কাজ করে যা পাই তা দিয়েই চলে আমার দিন। বিধবা ভাতা পেলেও সেটা সামান্য। বিধবা ভাতা দিয়ে ওষুধের টাকাও হয় না। বিধবা ভাতার টাকার পরিমাণ বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে গ্রাম বা শহরের বেশিরভাগ নারীরাই অজ্ঞ নারী দিবস সম্পর্কে। বেশিরভাগ নারীরাই জানে না তাদের অধিকার সম্পর্কে।
বাংলাদেশের সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী নারী, সাবেক স্পীকার নারী এবং দেশের অনেক নারী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ এখনো গ্রাম পর্যায়ে বেশিরভাগ নারী পিছিয়ে রয়েছে।
বিভাগ