আকাশ রহমান, বদরগঞ্জ (রংপুর) থেকে :রংপুরের বদরগঞ্জে মাদরাসার জায়গায় স্থাপন করা মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলীর অবৈধ সমিল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে হাফেজিয়া মাদরসার জায়গা পুনরুদ্ধার করেছে শতশত
এতিম শিক্ষার্থীরা।
গত দু‘দিন ব্যাপী বেদখলীয় জায়গা পুনরুদ্ধারের পর ওই জায়গাটি এখন
এতিম শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানা যায়, বদরগঞ্জ পৌরশহরের ডাক্তারপাড়ায় অবস্থিত খানকায়ে ওয়ারেছিয়া হাফেজিয়া মাদরাসা ও
লিল্লাহ বোডিং এতিমখানা। সেখানে শতশত এতিম দুস্থ অসহায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে
থাকে। ওই মহল্লার মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী ততকালিন সময়ে মাদরাসার জায়গা ভাড়া নিয়ে
সেখানে সমিল স্থাপন করে ব্যবসা বাণিজ্য করে শুরু করেন। মাদরাসার গা ঘেঁসে ও
ঘনবসতিপুর্ন আবাসিক এলাকায় সমিল স্থাপন পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর জেনে
প্রতিবাদী লোকজন সমিল বন্ধের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। কিন্তু
সেকেন্দার আলী কাউকে তোয়াক্কা না করেই দাম্ভিকতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
এছাড়াও
তিনি তার ব্যবসা শুরুর প্রথম দিকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে মাসিক জায়গা ভাড়া পরিশোধ করলেও
পরবর্তীতে আওয়ামী প্রভাব খাটিয়ে ভাড়া না দিয়ে উল্টো ওই মাদরাসার জায়গা তার নিজের বলে
দাবী করেন। কিন্তু মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করলে সেকেন্দার আলী তাদের উপর ক্ষুব্ধ
হয়ে ওঠেন, এবং নানা ক্ষোভের জেরধরে সম্প্রতিকালে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নামে আদালতে
ষড়যন্ত্রমুলক মামলা দায়ের করেন। সেইসাথে তিনি জোরপুর্বক মাদরাসার জায়গা দখলে নেওয়ার
আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এদিকে গত বুধবার দুপুরে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাদের জায়গা পুনরুদ্ধারের
জন্য জবর দখলকারী মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলীর সমিল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে সেখান থেকে তাকে
বিতাড়িত করার চেষ্টা করে। সেখানে দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত শত বাধা বিপত্তির
মুখেও জায়গা পুনরুদ্ধার কাজ চালিয়ে যায় এতিম খানার শতশত কোমলমতি শিক্ষার্থী ও বিক্ষুব্ধ
এলাকাবাসী। এবিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, লোকজন মাদরাসা ও
এতিমখানার জন্য জায়গা জমি দান করেন। আর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে
এতিমখানার জায়গা দখলের মহোতসবে মেতে উঠেছেন। বিষয়টি সত্যি দু:খজনক! বিএনপি
নেতা ভুট্রু লোহানী বলেন, এই বিষয়টি মিমাংসার লক্ষ্যে একাধিকবার আলোচনায় বসার
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী কারো কথায় কর্ণপাত করেন না।
তিনি মুক্তিযোদ্ধার দাপট দিখিয়ে এতিমখানার জায়গা দখল করে রেখেছিলেন। এতিম শিক্ষার্থীরা
তাদের জায়গা পুনরুদ্ধার করে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছে। এতিমখানার শিক্ষার্থী ওমর
ফারুক, মাসুদ রানা, আল-হাবিব ও মুশফিকুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আমাদের খেলার মাঠ
জোরপুর্বক দখল করে রেখেছিলেন। আমরা আমাদের মাঠ উদ্ধার পুর্বক সেখানে এখন খেলাধুলা
করছি। আমরা আমাদের খেলার মাঠ ফিরে পেয়ে অনেক আনন্দিত।
এ প্রসঙ্গে এতিম খানার সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকেদের বলেন, মুক্তিযোদ্ধা
সেকেন্দার আলী মাদরাসার জায়গা ভাড়া নিয়ে সেখানে সমিল স্থাপন করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা
বাণিজ্য করে আসছেন। বিগত স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকার দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে সাফাই
গাইতে শুরু করলে সেকেন্দার আলী এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আওয়ামী দাপটে মাদরাসার
জায়গা তার নিজের বলে দাবী করেন। ওই ঘটনার পর অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী মাদরাসা
কর্তৃপক্ষের নামে বদরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।