Type Here to Get Search Results !

ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যুদ্ধাহত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীর আহ্বান

ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর)প্রতিনিধি : ফুটফুটে চেহারার অধিকারী দুই ভাই বোন একসাথে হাতে হাত রেখে ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাঁদের রক্তাক্ত মাথায় রয়েছে ব্যান্ডেজ শরীরে পরিহিত রয়েছে ফিলিস্তিনি পতাকা অঙ্কিত সাদা গেঞ্জি। তাঁদের চেহারায় ফুটে উঠেছে যুদ্ধে আহত ফিলিস্তিনি শিশুদের অসহায় অবস্থার বাস্তবচিত্র।শরীরে পরিহিত গেঞ্জিতে লেখা রয়েছে "FREE FREE PALESTINE "।
দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরশহরের দারুল উলুম একাডেমী নামক এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২য় বার্ষিকী ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এ দৃশ্য সকলের মনকে নাড়া দিয়ে যায়। প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানাযায়,দারুল উলুম একাডেমীর ২য় বার্ষিকী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯ ঘটিকায় একাডেমী সংলগ্ন বিরামপুর ঐতিহ্যবাহী আনসার মাঠে শিক্ষার্থীদের যেমন খুশি তেমন সাজো ও বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ বেগম খালেদা জিয়া, বেগম রোকেয়া, সংগ্রামী নারী মালিনী, কেউবা ডাক্তার,সাংবাদিক,পরী, মাওলানাসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ মুগ্ধ সেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠানের নার্সারিতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী সৈয়দা মানহা রাফা(৫) ও তার ৩ বছরের ছোট ভাই এরদোয়ানকে নিয়ে "যুদ্ধাহত ফিলিস্তিনি শিশু"সেজে অংশগ্রহণ করে।
সৈয়দা মানহা রাফা ও এরদোয়ান বিরামপুর পৌরশহরের ৪ নং ওয়ার্ডের ইসলামপাড়া গ্রামের মোকাদ্দেসুর রহমানের ছেলে।তাঁদেরকে দেখে উপস্থিত সকলের হৃদয়ে যুদ্ধাহত ফিলিস্তিনি শিশুদের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির দৃশ্য নাড়া দিতে থাকে। কেন এই যুদ্ধ? এই অবুঝ শিশুগুলোর কি অপরাধ? বিশ্বের প্রতিনিধিরা কেন নিশ্চুপ রয়েছে? মানুষের মানুষত্ববোধ আজ কোথায়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই বা দিবে কে? ভাবতেই ভয়ংকর লাগে যদি এই বাচ্চাগুলো আমার রক্তের হতো? যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতায় "যুদ্ধাহত ফিলিস্তিনি শিশু" সেজে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে সৈয়দা মানহা রাফার মায়ের কাছে জানতে চাইলে মা তানজিদা আক্তার বলেন, যখন টিভি চ্যানেল, ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফিলিস্তিনি যুদ্ধাহত শিশুগুলোর কষ্টের ভয়াবহ দৃশ্য দেখি তখন আমি ঐ শিশুগুলোর মধ্যে আমার সন্তানদের দেখতে পায়।
যুদ্ধাহত শিশুগুলোকে দেখে ঐ পরিবারের উপর নেমে আসা বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা চিন্তা করতেই চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসে।মানুষ ধ্বংসকারী যুদ্ধ কতদিন চলবে এই যুদ্ধ বন্ধের ও যুদ্ধাহত ফিলিস্তিনি শিশুদের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। যুদ্ধাহত শিশুদের পাশে সকলকে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে আমার সন্তানদের এই "যুদ্ধাহত ফিলিস্তিনি শিশু " সেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে এনেছি। দারুল উলুম একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাওলানা আনিছুর রহমান বলেন, দারুল উলুম একাডেমী বাংলাদেশের নূরানী তা'লিমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম থেকে পরিচালিত। এখানে শিশুদের জন্য নূরানী শাখা,নাযেরা শাখা,প্লে, নার্সারি,ওয়ান ও বয়স্ক শাখা চালু রয়েছে।বিরামপুর উপজেলার নব প্রজন্মের শিক্ষা -দীক্ষার একটি আস্থাশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিষ্ঠানের সকলে ঐক্যবদ্ধ।
প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা দেখতে আসা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক আসিফ উদ্দিন বলেন, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতায় যারা অংশগ্রহণ করেছে অবশ্যই তাদের প্রতিষ্ঠান ও পরিবার থেকে উক্ত বিষয়গুলোর বিষয়ে গুরুত্বসহ তাঁদের বোঝানো হয়েছে। এটাই প্রাথমিক শিক্ষা এই শিক্ষাই তারা তাঁদের ভবিষ্যৎ জীবনে বহন করে বেড়াবে।অথচ আজ পত্রিকাসহ, ইউটিউব, অনলাইন, ফেসবুক আইডি ও ফেসবুকে পেজে জাতীয় পতাকার অবমাননা, শহীদ মিনারে লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলা,শহীদ মিনারে জুতা পায়ে উঠাসহ জাতীয় দৈনিক "প্রথম আলো" পত্রিকার অনলাইনে ২১ ফেব্রুয়ারি মহান মাতৃভাষা দিবসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে শহীদ মিনারে গোবর শুকানোর দৃশ্য দেখা যায়।
এটা ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগকে অবমাননার সামিল এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ধর্মীয় ও প্রাথমিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে নিজ সন্তানদের গড়ে তুলতে হবে। পরবর্তীতে দারুল উলুম একাডেমীর পরিচালক হাফেজ মাওলানা ফাহিম আহমদ এর সঞ্চালনায় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাওলানা আনিছুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন হাফেজ মাওলানা মন্জুরুল হক, মাওলানা আসাদুজ্জামান প্রমুখ।