Type Here to Get Search Results !

যান্ত্রিক যুগে চরাঞ্চলে একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি

শাকিল আহম্মেদ, ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) : বর্তমান যুগে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য যন্ত্র নির্ভর গাড়ির উপর সকলে নির্ভরশীল। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে যান্ত্রিক গাড়ি এখনকার মানুষের একমাত্র ভরসা। কিন্তু গাইবান্ধার ফুলছড়ির প্রত্যন্ত চরে দেখা মিলে অযান্ত্রিক অসংখ্য ঘোড়ার গাড়ি।
প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষের পণ্য পরিবহন, অসুস্থ রোগীকে বহন, এবং যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় ঘোড়ার গাড়িকে।
ফুলছড়ি উপজেলার পূর্ব গাবগাছী, বাজে ফুলছড়ি, পোড়ারচর, কড়াইবাড়ী, পূর্ব খাটিয়ামারী, পশ্চিম দেলুয়াবাড়ী, গলনার চর, কাবিলপুর, কালাসোনা চরসহ কয়েকটি চর এলাকা ঘুরে অসংখ্য ঘোড়ার গাড়ির দেখা পাওয়া যায়। জানা যায়, চরাঞ্চলে যান্ত্রিক যানবাহন না থাকায় আগের দিনে মানুষ প্রচন্ড গরমে উত্তপ্ত বালুতে পায়ে হেটে অনেক পথ পাড়ি দিত এবং নিজেদের উৎপাদিত পণ্যগুলো মাথায় অথবা লাঠিতে করে ঘাড়ে নিয়ে বহন করতো। কিন্তু ঘোড়ার গাড়ি উদ্ভাবনের পর চরাঞ্চলের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনসহ ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য একমাত্র মাধ্যম হিসেবে গাড়িটি ব্যপক ভুমিকা রাখছে। ফুলছড়ি উপজেলা চর এবং নদী বেষ্টিত এলাকা।
উপজেলার প্রধান নদী গুলোর মধ্যে তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র নদ অন্যতম। বর্ষার সময়ে এই নদ-নদী তাদের চিরোচেনা রুপ-যৌবন ফিরে পায়,পানিতে তলিয়ে যায় প্রত্যন্ত চরের নিম্নাঞ্চল।
এসময় চরবাসীর একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম হয়ে থাকে নৌকা। তবে শুকনো মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র প্রধান মাধ্যম ঘোড়ার গাড়ি। আর প্রত্যন্ত এসব চর এলাকার অনেক মানুষ ঘোড়ার গাড়ি দিয়েই তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। 
স্থানীয়রা জানান, চরাঞ্চালে শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি কমে যায় এবং বিশাল এলাকাজুড়ে চর জেগে উঠে। চরে যাতায়াতের জন্য যান্ত্রিক গাড়ি, ভ্যান, রিকশা, অটো, মাইক্রো চলাচল একেবারেই অসম্ভব।
তাই এই এলাকার যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ঘোডার গাড়ির ব্যপক ব্যবহার হয়। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট গুলো তেমন উন্নত না হওয়ায় এখানে যান্ত্রিক গাড়ি চলে না। তাই চরবাসিকে নানান সময় পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।
এসব সমস্যাকে উপেক্ষা করে তাদের নিত্য দিনের কাজ পরিচালনার জন্য তারা ব্যবহার করেন অযান্ত্রিক ঘোড়ার গাড়ি। এই গাড়ি কৃষকদের পণ্য পরিবহন, অসুস্থ মানুষদের জেলা সদরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জনহ নৌকা ঘাটে পৌঁছে দেওয়া, চরাঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া এবং চরবাসীর অভ্যন্তরীণ যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। ফুলছড়ি গজারিয়ার বাউশি এলাকার ঘোড়ার গাড়ি চালক সাইফুল বলেন, আমি এবং ২ ছেলে ১ মেয়ে ও স্ত্রীসহ পরিবারের ৫ জন সদস্য।
জীবাকা নির্বাহ করার জন্য ঘোড়ার গাড়ি চালাই। নদীর ওপার থেকে লোকজন পাট, গম, ভুট্টা, মরিচ এসব মালামাল নিয়ে আসে, আমি সেগুলো বাজারে পৌঁছে দেই। হাটের দিনগুলোতে ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়। কিন্তু অন্যান্য দিনগুলোতে ৩০০-৪০০ টাকা পাই। সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এই টাকা দিয়ে ৫ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। শুষ্ক মৌসুমে চর গুলো মরুভূমির আকার ধারণ করে। এসময় চরে উৎপাদিত হয় নানান শস্য সেগুলো পরিবহনের অন্য ব্যবস্থা না থাকায় চরের উৎপাদিত পণ্য গুলো দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিতে ঘোড়ার গাড়িতে করে এসব পণ্য নৌকাঘাটে নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। পরে সড়ক পথে এসব পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে নদ-নদী। শুকনো মৌসুমে চোখে পড়ে শুধুই বালুচর। চরের অনেক মানুষ তাদের জীবাকা নির্বাহের জন্য অনেকেই ঘোড়ার গাড়ি চালান।
স্থানীয় রওশন আরা বলেন, এই ঘোড়ার গাড়ির থাকার ফলে চরাঞ্চলের মানুষের উত্তপ্ত বালুতে হাটতে হয় না দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমেছে। ঘোড়া গাড়ি চালক আসাদুল (৩০) বলেন, কোনরকমে চলে আমার সংসার, যে টাকা আয় করি তা দিয়ে সংসার চালানো খুবই কস্টকর। আয়ের অন্য কোন পথ না থাকায় ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবাকা নির্বাহ করি। 
ফুলছড়ি হাটের ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, ফুলছড়ির বিভিন্ন চর থেকে পাট, ধান, মরিচ কিনে ঘোড়ার গাড়িতে করে নৌকা ঘাটে নিয়ে আসি। পরে পণ্যগুলো নৌকা দিয়ে নদী পার করে হাটে নিয়ে যাই। চরে অন্য কোন যানবাহন না থাকায় ঘোড়ার গাড়িতে করে এসব মালামাল নৌকাঘাটে নিয়ে আসতে হয়। ঘোড়ার গাড়ির চালকরা পণ্যের ওজন এবং দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নিয়ে থাকেন।