খালেক পারভেজ লালু, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুরে বহুল আলোচিত বাকরের হাট ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাককে অবশেষে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কুড়িগ্রাম ও বাকরেরহাট ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার দায়িত্ব প্রাপ্ত সভাপতি উত্তম কুমার রায় সাক্ষরিত এক পত্রে মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক (আরবি) আবুল কালাম আজাদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন।
জানা গেছে, বাকরেরহাট ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাকের সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র জনতা প্রতিবাদে মুখর হয়। এ পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসন তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। কমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
এরপর মাদ্রাসার দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কুড়িগ্রাম তদন্ত প্রতিবেদন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর প্রেরণ করেন।
এরই প্রেক্ষিতে গত ২৮ নভেম্বর ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার আইউব আলী স্বাক্ষরিত এক পত্রে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি মাদ্রাসা সমূহের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের চাকুরী শর্তাবলী সংক্রান্ত প্রবিধান- ২০২৩ ( সংশোধিত) এর অনুচ্ছেদ ১৫ বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মাদ্রাসা পরিচালনার স্বার্থে প্রবিধান( সংশোধিত) এর অনুচ্ছেদ ১২ (ক) বিধি মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রদানের জন্য সভাপতি বরাবর নির্দেশ প্রদান করেন। এরপরই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন বলে জানান।
বর্তমানে অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাকসহ তার ২ সহযোগী শিক্ষক স্থানীয় জনরোসের ভয়ে প্রায় তিন মাস মাদ্রাসায় অনুপস্থিত রয়েছেন।
এ অবস্থায় মাদ্রাসাটিতে শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন। দিন যতই যাচ্ছে অভিভাবক মহলে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়,ক্ষমতাচ্চুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় কতিপয় নেতার প্রত্যক্ষ মদদে অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তার লাগামহীন দুর্নীতিকে নিষ্কণঠক করতে তার পারিবারিক লোকদের নিয়ে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করেন।
বিতর্কিত ওই কমিটিতে অধ্যক্ষের নিজের মেয়ে জামাইকে সভাপতি, মেয়ে ও ভাগ্নে শিক্ষক প্রতিনিধি, আপন ভাই ও ভায়রা বিদ্যুোৎসাহী সদস্য,নিজের স্ত্রী সহ আত্মীয়-স্বজনকে দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন।
এরপর শুরু হয় লাগামহীন দুর্নীতি। শিক্ষকদের টিউশন ফি ও টাইম স্কেল প্রদানে টাকা আদায় , মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রদান না করা , প্রতিষ্ঠানের জমি লিজ প্রদানে অনিয়ম , মন্ত্রণালয়ের অডিটর ম্যানেজ করার কথা বলে শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় ।
এছাড়াও টাকা না দিলে অধ্যক্ষ শিক্ষক কর্মচারীদের অবসরকালীন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এখনো মধ্যবিত্ত পরিবারের অসহায় ২ জন শিক্ষক টাকা দিতে না পারায় তাদের অবসরকালীন কাগজপত্র স্বাক্ষর করেনি ঐ অধ্যক্ষ। শুধু তাই নয় ৯ জন শিক্ষককে নিয়োগ দিয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এসব শিক্ষক নিয়োগে মেধার চাইতে টাকা এবং আত্মীয়তা বেশি প্রাধান্য পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাকের বরখাস্ত হওয়ার খবর বাকরেরহাট এলাকায় পৌঁছুলে অনেকেই আনন্দ উল্লাস প্রকাশ এবং মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) উত্তম কুমার রায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের কথা স্বীকার করে বলেন, মাদ্রাসায় পাঠদান কার্যক্রম স্বাভাবিক করতেই এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।