Type Here to Get Search Results !

পরীক্ষা চলছে ,পরীক্ষার্থী নেই

ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি, চিলাহাটি ওয়েব : দাখিল মাদ্রাসায় বার্ষিক পরীক্ষা চললেও এবতেদায়ী শাখার পরীক্ষা কক্ষে শিক্ষার্থী নেই। এমন অবস্থা দেখা যায় দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের খানপুর কারামতিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও দিওড় ইউনিয়নের ঝানজার দাখিল মাদ্রাসায় । উপজেলার মাধ্যমিক অফিস থেকে জানা যায় ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে উপজেলার ২৮ টি এবতেদায়ী শাখার ১ম থেকে ৫ম শ্রেণীর জন্য ৩ হাজার ৯ শত শিক্ষার্থীর জন্য বই দেওয়া হয়। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষাতে দুটি প্রতিষ্ঠানের এবতেদায়ী শাখার দুইজন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি।
সোমবার (২৫ শে নভেম্বর) সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০ টার দিকে সরেজমিনে খানপুর কারামতিয়া দাখিল মাদ্রাসার পরীক্ষা কক্ষে গিয়ে দেখা যায় বার্ষিক পরীক্ষায় ৪র্থ শ্রেণীর শুধু ১ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত। পরীক্ষা কক্ষে ৩য় ও ৫ম শ্রেণীর কোন শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই। এছাড়াও ৬ষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের একটি কক্ষে প্রতি বেঞ্চে তিনজন করে বসিয়ে পরীক্ষা নেন।এর আগে ২৮ অক্টোবর ৪র্থ শ্রেণীর ঐ ১ জন ছাত্র উপস্থিত থাকায় এবতেদায়ী শাখার ২ জন শিক্ষকের ১ জনও কোন ক্লাস নেইনি বলে জানান সেই শিক্ষার্থী। এবতেদায়ী শাখার পরীক্ষার্থী ১ জন উপস্থিত এ বিষয়ে জানতে চাইলে এবতেদায়ী শাখার শিক্ষক আঃ রাজ্জাক বলেন আজকে ১ম ও ২য় শ্রেণীর পরীক্ষা নেই।
মাদ্রাসার সুপার অনুপস্থিত থাকায় এবিষয়ে মুঠোফোনে কল করলে তিনি ইবতেদায়ী শাখার শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অনেক কম বলে জানান। চড়াই ভিটা পিকে দাখিল মাদ্রাসার এবতেদায়ী শাখার একটি কক্ষে ৩য়,৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর ১৯ জন পরীক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
তারা পার্শ্ববর্তী কওমী মাদ্রাসার ছাত্র।এর আগে ২৮ অক্টোবর উক্ত মাদ্রাসার এবতেদায়ি শাখার শ্রেণী কক্ষে শিক্ষক উপস্থিত থাকলেও উপস্থিত ছিল না কোন শিক্ষার্থী। দিওড় ইউনিয়নের ঝানজার দাখিল মাদ্রাসার পরীক্ষা কক্ষে ৫ম শ্রেণীর শুধু ১ ছাত্রী উপস্থিত।এর আগে ২৮ অক্টোবর উক্ত মাদ্রাসার এবতেদায়ি শাখায় ৪ জন শিক্ষক থাকলেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল একেবারে শূন্য। একারণে তালাবদ্ধ থাকে শ্রেণিকক্ষগুলো। স্থানীয়রা বলছেন, শিক্ষার মান ভালো না হওয়ায় মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার্থী আসছে না। এছাড়াও বিরামপুর শালবাগান মহিলা দাখিল মাদ্রাসা গত ১৭ নভেম্বর দুপুরের পর মাদ্রাসা বন্ধ করে সকলে চলে যায়। এবিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শমসের আলী মন্ডলের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন মাদ্রাসাগুলোতে দুপুরের পর আর ক্লাস করায় না এবং সপ্তাহে একদিন হাফ ক্লাস করায়। এবতেদায়ি শাখায় কোনো শিক্ষার্থী না এলেও হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দেখানো হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়েই শিক্ষার্থী শূন্য।জানতে চাইলে ঝানজার মাদ্রাসার এবতেদায়ি শাখার প্রধান মোখলেছুর রহমান বলেন,পাশেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, সেগুলোতে উপবৃত্তি সুবিধা থাকায় শিক্ষার্থীরা সেদিকে যাচ্ছে।তবে হাজিরা খাতায় উপস্থিতির বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসার এবতেদায়ি শাখায় শিক্ষার্থী নেই। হাজিরা খাতায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের অনেকে অন্যত্র পড়াশোনা করছে।মাদ্রাসায় শিক্ষার মান খারাপ হওয়ায় স্থানীয় শিক্ষার্থীরা এখানে আসতে অনাগ্রহী।
শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসামুখী করতে কোনো উদ্যোগও নেই শিক্ষকদের। ফলে পাঠদান ছাড়াই কিছু এবতেদায়ি শাখার শিক্ষক বেতনভাতা তুলছেন পাচ্ছেন সব সুযোগ সুবিধা। এবছর উপজেলায় মাদ্রাসার বোর্ডে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ছিল বিরামপুর উপজেলা। দাখিল মাদ্রাসার এবতেদায়ী শাখার ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে এবতেদায়ী শাখার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান না করার কারণ দেখানোর পাশাপাশি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের তদারকি না থাকাকে দায়ী করেন সচেতন মহল।
বিরামপুর উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুস সালাম বলেন- দাখিল মাদ্রাসার এবতেদায়ি শাখায় শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী বই দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকার বিষয়ে শিক্ষকদের অবহেলাকে দায়ি করেন। বিরামপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শমসের আলী মন্ডল বলেন, দাখিল মাদ্রাসার এবতেদায়ী শাখার শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তিসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থী কম হয়ে থাকে। শিক্ষার্থী বাড়ানোর বিষয়ে শিক্ষকদের আমরা বলে থাকি কিন্তু কোন লাভ হয় না।
বিভাগ