ইব্রাহীমমিঞা,বিরামপুর(দিনাজপুর)প্রতিনিধি:শ্রেণিকক্ষ-সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার চাহিদা থাকায় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিতে হচ্ছে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত শ্রেণী কক্ষে নেই রয়েছে মাত্র ২টি শ্রেণিকক্ষ। এ জন্য ক্লাস নিতে হয় খোলা আকাশের নিচে। যদিওবা শ্রেণীকক্ষ সংকট বিদ্যালয়গুলোতে দুই শিফটে শ্রেণী পাঠদানের নির্দেশনা রয়েছে।
রবিবার (২০ অক্টোবর)সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্বনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে মাটিতে বিভিন্ন ধরনের চট ও পাটি বিছিয়ে বসে ক্লাস করছে কেউবা আবার পতাকা মঞ্চে ।পাশে দাঁড়িয়ে ক্লাস নিচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক। জানাযায় প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত এরকম খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করানো হয়।পরবর্তীতে প্রাক প্রাথমিক ও ১ম,২য় শ্রেণীর ছুটি হলে শ্রেণী কক্ষে পাঠদান করানো হয় ৩য়,৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের।
৩য়,৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বলেন, গ্রুপ ক্লাস করতে প্রতিদিন আমাদের খোলা আকাশের নিচে বসতে হয়। অনেক সময় গরম থাকলে একটু ছায়াতলে বসিয়ে শিক্ষকেরা ক্লাস নেন।প্রচণ্ড গরমে আমাদের খোলা আকাশের নিচে বসে ক্লাস করতে হয়। এ জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবনের প্রয়োজন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নেওয়া একদিকে যেমন কষ্টের, অপরদিকে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে মনোযোগ হারায়। সর্বোপরি বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় বিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে অনেকে মোটরসাইকেল ও ট্রাক্টর চালিয়ে নিয়ে যায় এছাড়াও বাইরের হইচই শব্দের কারণে সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ানো সম্ভব নয়। তারপরেও শিক্ষার্থীদের চাহিদার কারণে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করাতে হচ্ছে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক গোলাম আজম বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৮৯ সালে স্থাপিত হলে বিরামপুর এলজিইডির বাস্তবায়নে ১৮ মার্চ ১৯৯৯ সালে প্রকল্পিত ব্যয় ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫ শত টাকায় ৩ কক্ষ বিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণ হয়।বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে জাতীয়করন হলেও অদ্যাবধি ২ যুগেও আর কোন ভবন নির্মাণ হয়নি বিদ্যালয়টিতে। বিদ্যালয়ে প্রয়োজনের তুলনায় আছে মাত্র ৩টি কক্ষ।১ টি কক্ষ অফিস রুম হিসেবে ব্যবহার করা হয় আর ২ টি ১ম ও ২য় শ্রেণীর জন্য ব্যবহার করা হয় এছাড়াও প্রাক প্রাথমিকের পাঠ দান বাধ্য হয়ে সিঁড়ি রুমে নেওয়া হয়।বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ১২১ জন। সেই তুলনায় শ্রেণিকক্ষ অনেক কম। এ জন্য বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিতে হয়। এছাড়াও তিনি বলেন ২ টি টয়লেট আছে যা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রয়োজনের তুলনায় কম। বিদ্যালয়ে বিল্ডিং এর বিষয়ে বিভিন্ন মিটিংয়ে তুলে ধরলেও ২ যুগেও কোন বিল্ডিং হয়নি বিদ্যালয়টিতে।
অপরদিকে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানের বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-ছাত্রী অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও সে সমস্ত বিদ্যালয়গুলোতে বাউন্ডারি ওয়ালসহ বিল্ডিং হয়েছে। আমাদের সন্তানেরা এতো কষ্ট করে এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতেছে ।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উক্ত ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জনার্ধন বলেন, শ্রেণীকক্ষের সমস্যা যে সমস্ত বিদ্যালয়ে রয়েছে সেগুলোতে ২ শিফটে ক্লাসের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা রয়েছে। তবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সুবিধা অনুযায়ী ১ শিফটে ক্লাস নিতে পারেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুনা লায়লা বলেন, আমি বিরামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর বিশ্বনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিল্ডিংয়ের চাহিদা দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না। তবে পর্যায়ক্রমে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিল্ডিং হবে।