আকাশ রহমান, বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি, চিলাহাটি ওয়েব : রংপুরের বদরগঞ্জে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হাফ ডজন বিয়ে করেছেন আব্দুর রহিম নামে একজন মাদরাসার শিক্ষক। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালতে
নারী শিশু নির্যাতন দমন ও যৌতুক মামলা দায়ের করার পর তিনি ছয় নাম্বার স্ত্রীকে
নিয়ে এখন লাপাত্তা।
এ কারণে গত ২বছরেও ১৭টি ধার্য্য তারিখ অতিবাহিত হলেও
আইন অমান্যকারী আসামী অদ্যবধি আদালতে উপস্থিত হয়নি। এদিকে আদালতে মামলা
চলাকালে স্বাক্ষীগণের স্বাক্ষ গ্রহনের মুহুর্তে প্রধান আসামীর অনুপস্থিতিতে
বিচার কার্য বিলম্ব হওয়ার আশংকা করছে অসহায় বাদীনি ও তার পরিবার।
মামলা সুত্রে জানা যায়, উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর মন্ডলপাড়া
শেখেরহাট গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে আব্দুর রহিমের সাথে একই উপজেলার
লোহানীপাড়া ইউনিয়ন গ্রামের শাকিলা তাফরীনের গত ৪ঠা নভেম্বর-২০২১ ইং তারিখে
আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহের কাজ সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর কনের বাবা তার মেয়ের সুখের
কথা চিন্তা করে মেয়ে জামাইকে দেড় লাখ নগদ টাকা সহ বিভিন্ন প্রকার উপঢৌকন
প্রদান করেন।
কিন্তু সংসার করাকালে গত ৮ই মে ২০২২ তারিখে তার স্বামী আড়াই লাখ
টাকা যৌতুক সহ একটি মোটর সাইকেল এর জন্য স্ত্রীকে চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু
স্ত্রী শাকিলা এই মোটা অংকের টাকা যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার
স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ী ও ভাসুর তার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সেইসাথে তারা সকলে মিলে
গৃহবধু শাকিলা তাফরিনকে বেদম মারপিট করে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনার পর
শাকিলা বাবার বাড়ীতে চলে যায়। এরই মধ্যে কোকিল কণ্ঠি আব্দুর রহিম প্রথম স্ত্রীর
অনুমতি ছাড়া প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় পরপর আরো ৫টি বিবাহ
করেছেন। তার বহু বিবাহের বিষয়টি জানাজানি হলে প্রথম স্ত্রী শাকিলা তার প্রতারক
স্বামীর বিরুদ্ধে রংপুর বিজ্ঞ আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ধারা মোতাবেক
মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা চলাকালে ১৪আগষ্ট-২০২৩ সালে মামলার বাদীনি বিজ্ঞ
আদালতে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলা দায়েরের পর গত ২বছরে ১৭টি
ধার্য্য তারিখ অতিবাহিত হলেও আইন অমান্যকারী এই মাদরাসার শিক্ষক ও প্রতারক
ইউটিউবার আব্দুর রহিম আদালতে হাজির হয়নি।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে
শেখেরহাট এলাকার স্থানীয় লোকজন বলেন, প্রতারক আব্দুর রহিম দেশের প্রচলিত আইন
ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সর্বশেষ ৬নাম্বার স্ত্রী বিদিশা পারভীনকে নিয়ে
আত্মগোপন করে আছেন।
এ বিষয়ে মামলার বাদীনি শাকিলা বলেন, আমার স্বামী
একজন প্রতারক। তিনি একটি মাদরাসার শিক্ষকতাকরার পাশাপাশি আব্দুর রহিম নামে
একটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করে আসছেন। তিনি বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলের
ভিডিও ইউটিউবে ছেড়ে থাকেন। তিনি আমাকে বিয়ে করার পর আমার অনুমতি
ছাড়া আরো ৫টি বিয়ে করে তাদের জীবন নষ্ট করেছেন। আমি তার প্রতিটি স্ত্রীর নাম
ও ঠিকানা সংগ্রহ করেছি। বর্তমানে তিনি সর্বশেষ স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করছেন
বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আমার অনুমতি ছাড়া একাধিক বিয়ে করা এবং আমাকে
ভরনপোষন না দেওয়ায় আমি তার বিরুদ্ধে আদালতে পরপর দুটি মামলা দায়ের করেছি। কিন্তু
তিনি একদিনও আদালতে হাজির হয়নি। মাঝে মধ্যে আমার শ্বশুর-শ্বাশুরী ও ভাসুর
আদালতে হাজির হলেও তিনি গত ২বছর ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন,
বর্তমানে আদালতে মামলার স্বাক্ষীদের স্বাক্ষগ্রহণ চলছে। তাই তার অনুপস্থিতিতে
মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় বিলম্ব হচ্ছে এবং আমি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার
আশংকা করছি। বদরগঞ্জ থানার এসআই ওয়ালিউর রহমান চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে বলেন-
আসামী আব্দুর রহিমের নামে আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হওয়ার পর থেকে
তিনি নিরুদ্দেশ। থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন সোর্চকে কাজে
লাগিয়েও কাজের কাজ হচ্ছেনা। তবে তাকে গ্রেফতারের জন্য জোর ততপরতা চলছে।