আকাশ রহমান, বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি, চিলাহাটি ওয়েব : বর্ষার পরেও জলাশয়ের আশে পাশেই দেখা মেলে কালোসুন্দরী পাখিদের ছোট ছোট গ্রাম। তাদের বাড়ীঘর ইট কিংবা পাথরের তৈরি না হলেও তারা বসবাস করে গাছের মগডালে খড় কুটোর তৈরি জীর্ণ নীড়ে। সাধারণত দিনের বেলায় এই পাখিরা বাসা ছেড়ে জলাশয়ের ধারে নেমে আসে শিকারের সন্ধানে।
দিনের বেশিরভাগ সময় জলের তলদেশে মাছ শিকার করে সন্ধ্যায় ফিরে যায় আপন নীড়ে। কাক কোকিলের মত গায়ের রং কালো বলে কোন কোন এলাকার লোকজন এই পাখিকে কালোসুন্দরী বা পানি কামড়ি বলে থাকে। তবে যে যাই বলুক না কেন এই কালোসুন্দরী পাখির প্রকৃত নাম হচ্ছে পানকৌড়ি পাখি। অতিশান্ত প্রকৃতির এই পাখিটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক না হলেও পুকুর ডোবা খাল বিলের মাছ শিকার করতে তার জুড়ি নেই। জলাশয় যত গভীর হোকনা কেন একটু সুযোগ পেলেই ডুব মেরে শিকার খুঁজতে থাকে চঞ্চলা এই পানকৌড়িরা।
প্রতিদিন তাদের খাদ্য তালিকায় থাকে ৪-৫ শ গ্রাম ছোট ছোট মাছ। আর এই খাদ্য সংগ্রহ করতে শীত কিংবা গ্রীষ্মে জলের তলদেশে ডুবতে হয় দিনে কমপক্ষে ৩৪-৩৫বার। তবে পুকুর ডোবায় মাছের পরিমানের উপর নির্ভর করে তাদের জলকেলি করা। এছাড়াও জলাশয়ে মাছ না পেলে শামুক ঝিনুক, ব্যাঙ, কাকড়া ও পোকা মাকড় খেয়ে এই পাখিরা জীবন ধারণ করে থাকে। পরিবেশ বিদদের মতে, আগের দিনে যত্রতত্র জশালয়ের ধারে এই পানকৌড়িদের দেখা পাওয়া যেত।
এখন নদীনালায় ভাটা পড়ে যাওয়ায় দেশীয় জাতের মাছের মতই প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে চিনচেনা এই পানকৌড়ি পাখি। এমনকি দেশের পুকুর ডোবার স্বচ্ছ জলে মুরগীর বিষ্টা, মলমুত্র ও নানা ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলে জলের স্বচ্ছতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই দুষিত জলে পর্যাপ্ত পরিমান শিকার করতে না পেরে সৌখিন পানকৌড়িরা বংশ বিস্তার করতে পারছেনা।
আজ বুধবার বিকেলে রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরশহরের মুন্সিপাড়া এলাকায় একটি জলাশয়ের ধারে হঠাৎ করে সবার চোখে পড়ে পানকৌড়ি জুটির। তারা ডোবার জলে শিকার করার পর বৈকালী রোদে সারাদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে ডানা শুকাতে ব্যস্ত ছিল। ঠিক সেই মুহুর্তে অনেকের মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দি হয়ে যায় পানকৌড়ির ডানা শুকানোর একটি মনোরম দৃশ্যপট।
এ প্রসঙ্গে বদরগঞ্জ এলাকার মোরশেদ আলম নামে একজন মৎস্যচাষী সাংবাদিকদের বলেন, পানকৌড়ি পাখি সর্বদা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। তাই তারা সর্বদা নর্দমা কিংবা নোংরা জলাশয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। এই পাখি প্রতিবার জলের তলা থেকে মাছ ধরার পর ডাঙ্গায় এসে ডানাপাখা শুকিয়ে নেয়। শুধু তাই নয়, জলে নামার পর যতক্ষণ পর্যন্ত শিকার ধরতে না পারে ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যায়। এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, দেশের নদীনালা খালবিলে আগের মত দেশীয় জাতের মাছ পাওয়া যায়না। তাই পানকৌড়িদের বেঁচে থাকা এখন দুস্কর হয়ে পড়েছে।
এবিষয়ে বদরগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ওই অফিসের জনৈক কর্মকর্তা বলেন, আমি শুধু পানকৌড়ি পাখির কথা বলব না। বন্য পরিবেশ পরিস্থিতি ও ক্ষেতে খামারে অব্যাহত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এদেশ থেকে দিনেদিনে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে নানা জাতের চেনা-অচেনা পাখি।
তার উপর আবার অসাধু পাখি শিকারীরা নির্বিঘ্নে শিকার করছে বক, সারস, হরিয়াল ও ঘুঘু সহ ইত্যাদি পাখি। এভাবে চলতে থাকলে হয়তোবা আর কখনো বঙ্গ জলাশয়ের ধারে দেখা মিলবেনা শোভামন্ডিত কালোসুন্দরী কিংবা পানকৌড়ি পাখির।