Type Here to Get Search Results !

‘মৃত’ মর্জিনা এসে বললেন, ‘আমি তো মরিনি’

জয়পুরহাট প্রতিনিধি, চিলাহাটি ওয়েব : সামাজিক নিরাপত্তার বয়স্ক ভাতাভোগী মর্জিনা বেওয়া (৬৫) অসুস্থ হয়ে বাড়িতে ছিলেন। অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি চলতে পারেন না। এক বছর ধরে তিনি ভাতা পান না। ঘটনা জানতে সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁকে ‘মৃত’ দেখিয়ে তাঁর ভাতা বন্ধ করা হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে তিনি কর্মকর্তাদের বলেন, ‘আমি তো মরিনি।’ মর্জিনা বেওয়ার বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জি ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে। পাঁচ বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন। এক বছর ধরে ভাতা আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি আর্থিক সংকটে পড়েন। জীবিত এই নারীকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ করা হয়। তাঁকে কীভাবে ও কারা মৃত দেখাল, কিছুই জানেন না তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগীরা জীবিত আছেন কি না, প্রতিবছর তা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে যাচাই করা হয়। ছয় মাস আগে ধরঞ্জি ইউনিয়নে ভাতাভোগীদের যাচাই–বাছাই করা হয়। এরপর পরিষদ থেকে সমাজসেবা কার্যালয়ে ভাতাভোগীদের তথ্য পাঠানো হয়। সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ভাতাভোগীদের তথ্য হালনাগাদ করে ভাতা চালু বা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
মর্জিনা বেওয়া মারা গেছেন বলে ইউপি কার্যালয় থেকে তথ্য দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য তাঁর স্থলে অন্য আরেকজন সুবিধাভোগীকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মর্জিনা বেওয়া বলেন, পাঁচ মাস ধরে তিনি ভাতা পান না। এ ব্যাপারে জানতে তিনি সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কার্যালয়ের লোকজন কাগজপত্র ঘেঁটে জানান, তিনি মারা গেছেন। এ জন্য তাঁর ভাতা বাতিল করা হয়েছে। এ কথা শুনে তিনি অবাক বনে যান। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চেয়ারম্যান তাঁর মৃত্যুসনদও নাকি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ঘটনা শুনে কর্মকর্তাদের বললাম, আমি তো মরিনি। আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। বয়সের কারণে কাজকর্ম কিছুই করতে পারি না। ভাতার টাকায় ওষুধ কিনে খেতাম। ভাতা বন্ধ থাকায় অনেক কষ্ট হচ্ছে। যে–ই এ কাজ করুক, আমার ব্যবস্থা করুক।’ তাঁর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাতাভোগীদের তথ্য যাচাই করতে সশরীর ইউপি কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে মাইকিং করা হয়েছিল। তখন মর্জিনা হাজির হননি। যাঁরা উপস্থিত ছিলেন না, তাঁদের মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘মর্জিনা চালাকি করেছেন।
এ কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’ ধরঞ্জি ইউপির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর সমাজসেবা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ভাতাভোগীরা জীবিত কি না, ইউনিয়ন পরিষদে যাচাই করা হয়। এর আগে ইউনিয়নে মাইকিং করে ভাতাভোগীদের সময় জানানো হয়। যাচাইয়ের সময় হয়তো মর্জিনা উপস্থিত ছিলেন না। এ জন্য তাঁর নাম মৃতের তালিকায় উঠেছিল। যাচাই ছাড়া মৃত্যুসনদ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘মর্জিনা বেওয়া জীবিত আছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। অনেকগুলো কাজ করতে গিয়ে আমাদের ভুল হয়েছে।
সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি দ্রুত মর্জিনা বেওয়ার ভাতা চালুর ব্যবস্থা করবেন।’ পাঁচবিবি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের তালিকায় মর্জিনা বেওয়াকে মৃত দেখানো হয়েছে।
এ জন্য তাঁর ভাতার কার্ড বাতিল করে নতুন সুবিধাভোগীর নাম প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে মর্জিনার ভাতা আবার চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।