Type Here to Get Search Results !

নদীর পাড়ে বৈশাখজুরে ভাংগার মেলা

ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : ‘মেলায় যাইরে’… পয়লা বৈশাখ এলেই আমাদের কানে সবচেয়ে বেশি ভেসে আসে এই সুরটি। বৈশাখকে বরণ করতে আনন্দে মেতে উঠে বাঙালি জাতি। তারই ধারাবাহিকতায় সারা দেশের ন্যায় দিনাজপুরের বিরামপুরে গ্রামীণ জনপদের মানুষজনের মাঝে বইছে প্রাণের ছোঁয়া। পহেলা বৈশাখ আর বৈশাখী মেলা যেন মানুষের মাঝে প্রাণের স্পন্দন হয়ে আছে। বাঙালির কৃষ্টি কালচার আর ঐতিহ্য নিয়ে বর্ণিল সাজে গ্রামে-গ্রামে বৈশাখী মেলা আয়োজনের মাধ্যমে পুরো মাস ধরে এখানে চলে বর্ষবরণ।
এই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুরো বৈশাখ মাসজুরে মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। পয়লা বৈশাখে বিরামপুর পৌরসভার মির্জাপুর মন্ডপে, বৈশাখ মাসের প্রতি বৃহস্পতিবার পৌরসভার দেবীপুর মাঠে চুনের মেলায়,বিনাইল ইউনিয়নে বৈশাখ মাসের দ্বীতীয় বুধবার চামন্ডির মেলা,পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের জোতজয়রামপুর এলাকায় বিরামপুর ছোট যমুনা নদীর বাঁধের উপর বৈশাখ মাসের প্রতি শুক্রবার ভাংগার মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।গ্রামীণ এ মেলায় সব ধর্মের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সর্বজনীন উৎসবের এক অনবদ্য উদাহরণ। অনেক জায়গায় কেবল পহেলা বৈশাখে বসে একদিন ব্যাপী বৈশাখী মেলা। আবার কোন কোন জায়গায় বৈশাখ মাসের বিশেষ তারিখ ও বারে অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী মেলা। এক সময় এসব মেলায় সার্কাস, পুতুল নাচ, যাত্রা দল আসতো, বসতো নাগরদোলা।
নিরাপত্তাহীনতাসহ নানাবিধ প্রতিকূলতায় তাদের মেলায় আগমন বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া খোলা মাঠের বিশাল পরিসরে ছোটদের খেলনা, হাতে তৈরি বিভিন্ন মৃৎশিল্পের সামগ্রী এবং বিন্নি ধানের খৈ, মুড়ি, উফরা, তিলুয়া, কদমা, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টিসহ হরেক রকম খাদ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসতেন ব্যবসায়ীরা। পাওয়া যেতো কাঠ-বাঁশের তৈরি গৃহস্থালী জিনিসপত্র থেকে শুরু করে প্রসাধন সামগ্রী পর্যন্ত। কিন্তু কালের বিবর্তনে ঐতিহ্য হারাচ্ছে এসব গ্রামীণ মেলা।
বিরামপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোর্শেদ মানিক বলেন, ‘আগে কয়েকটি গ্রামের সীমান্তবর্তী স্থানে, অথবা নদীর ধারে, বটতলায় বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হতো। এসব মেলায় নামতো হাজার হাজার মানুষের ঢল। মেলায় থাকতো কাঁচের চুড়ি, রঙ-বেরঙের ফিতা, তাঁতের শাড়ি, নকশা করা হাতপাখা, কামার ও কুমোরের দোকান, মুড়ি-মুড়কি-খই, সন্দেশ, বাতাসা, মিষ্টি, মাটির তৈরি খেলনা, পুতুল, ঘুড়ি, নাটাই, গুলতি, অলংকার, তৈজসপত্র, বেলুন, বাঁশি, ফলমূল ইত্যাদি। আর বিনোদনের জন্যে থাকতো নাগরদোলা, বায়োস্কোপ, জারি-সারি-ভাটিয়ালি গানের আসর, কবিগান, ষাড়ের লড়াই, লাঠিখেলা, পুতুল নাচ, নৌকা বাইচ, কুস্তি খেলা ইত্যাদি।
তবে দিন দিন এসব সুখস্মৃতি ম্লান হয়ে যাচ্ছে।’ গতবছর থেকে বৈশাখ মাসের প্রতি শুক্রবার বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের জোতজয়রামপুর গ্রামের যমুনা নদীর পাড়ে বাঁধের উপর মেলাটি হয়ে আসছে। বিরামপুর উপজেলা ও ফুলবাড়ী উপজেলার মাঝে ছোট যমুনা নদীর পাড়ে বাঁধের উপর থেকে নদী ও প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে আশে ২ উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানের মানুষ।
একসময় ছোট যমুনা নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর নতুনভাবে বাঁধ নির্মাণ করায় এই স্থানটিতে বৈশাখের প্রতি শুক্রবার বিকেলে জনসমাগম হয় সেই থেকে এই মেলাটি ভাংগার মেলা নামে সকলের কাছে পরিচিত। পহেলা বৈশাখ উদযাপনে আমাদের জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্যের সামগ্রিক প্রতিচ্ছবির দেখা মেলে। একদিকে যেমন উৎসবে মেতে ওঠে নবীন-প্রবীণ, শিশু ও কিশোররা; অন্যদিকে নিজস্ব সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের নতুন প্রজন্মও পরিমার্জিত ধারণা লাভ করতে পারে।
বিভাগ