উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকায় এ বছর ব্যাপক ভুট্টার আবাদ হয়েছে। বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকায় কৃষকের মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এই এলাকার চাষীরা ভুট্টা চাষ করছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। পাশাপাশি আশানুরূপ দাম না পাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে তাদের মধ্যে। জাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ধান ও গমের পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের ভুট্টাচাষ এই এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তিস্তার বিস্তীর্ণ এলাকার গাঢ় সবুজ সমারোহ জানিয়ে দিচ্ছে ভুট্টা চাষের অস্তিত্বের কথা। এছাড়া চারপাশের মাঠগুলোতেও একই রকম সবুজের সমারোহ দেখা যাচ্ছে। এ উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮ টি ইউনিয়ন নদী বিধ্বস্ত। এই ৮ টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে লোকজন তাদের জমা-জমিতে বিভিন্ন প্রকার রবি ফসলের চাষাবাদ করেছেন। আবাদের লক্ষণ মোটামুটি ভাল। রবি ফসলকে ঘিরে নদী গর্ভে নিঃস্ব হওয়া হাজার হাজার মানুষের মুখে এখন সুখের হাসি।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলায় ১টি পৌরসভা সহ ১৩টি ইউনিয়নের ভুট্টা চাষের লক্ষ্য মাত্রা ৭৮০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ৮ হাজার ৫ শত ২ মেঃটন নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলার চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ও প্রন্তিক চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ভুট্টা চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সহ চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, সবুজে-সবুজে ভরে উঠেছে ভুট্টা ক্ষেত। সবুজ রঙের গাছগুলো দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। ক্ষেতগুলোতে পানি ও কীটনাশক দেয়া এবং পরিচর্যায় কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ক্ষেতগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করছেন। তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে হাজার হাজার পরিবার আবাদী জমি, বসতবাড়ী হারিয়ে নিঃস্ব হয়। এই নিঃস্ব পরিবার গুলো বাঁচার তাগিদে তাদের বংশীয় ঐতিহ্য ত্যাগ করে রিকসা, ভ্যান চালা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শ্রম বিক্রি করছিল। কিন্তু নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় জেগে উঠে ছোট ছোট অসংখ্য বালু চর। এই চরে রবি ফসল চাষ করা যায় নির্ভয়ে। তাই রবি মৌসুমে কৃষকরা ব্যাপক চাষাবাদে মাঠে নেমেছে কোমড় বেঁধে। নদীর ধু-ধু বালু চরে যেখানে যে ফসল প্রযোজ্য তাই চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। আবাদের ফলন খুব ভাল হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এবারে বিভিন্ন চরাঞ্চলে বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভুট্টার চাষের মাধ্যমে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। বন্যার পানিতে পলি জমে জমি আরো উর্বর হয়েছে। তাই ভুট্টা চাষে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। এছাড়াও এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলনও হয়েছে।
উপজেলার টিটমার চর এলাকার ভুট্টা চাষি খোরশেদ আলম বলেন, এবারে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পলি জমে জমি আরো উর্বর হয়েছে। এছাড়াও এখানকার মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর আমি ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি ৩০-৩৫ মণ করে ফলনের আশা করছি। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা ভুট্টা ঘরে উঠানো পর্যন্ত আরও খরচ হবে ৩০ হাজার টাকা। সকল খরচ বাদ দিয়ে ১ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন এ চাষি। গত বছর প্রতিমণ ভুট্টা ১ হাজার থেকে ১২'শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এবছরও গত বছরের থেকে বেশি দামের আশা করছেন।
এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল সহ অন্যান্য এলাকার ভুট্টা চাষিদের মধ্যে আব্দুল হক, আবুল হোসেন, জয়নাল, সলেমোন ও মোস্তাফিজার রহমান সহ আরও অনেকেই জানান, ভুট্টা চাষ করে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। ফসলের চেহারা দেখে তাদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত আশানুরুপ ফল পাবেন কিনা এ নিয়ে চিন্তিত তারা। তারা আরও বলেন, জমিতে পানি সেচের জন্য ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন ও বিদ্যুৎ না থাকায় চড়ামূল্যে সোলার প্যানেলের মটরচালিত পাম্প দিয়ে সেচ দেয়া হয়। এতে তাদের খরচের হার একটু বেশি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, এবারে আমার ব্লকে চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকায় মোট ৬৫ টি ভুট্টার প্রদর্শনী রয়েছে। এ সকল প্রদর্শনীতে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভুট্টা চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন জানান, রবি ফসলের ৭০ ভাগই চরাঞ্চলে চাষাবাদ হয়। এবারে বিভিন্ন চরাঞ্চলে বন্যার কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভুট্টার চাষের মাধ্যমে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। বন্যার পানিতে পলি জমে জমি আরো উর্বর হয়েছে। তাই ভুট্টা চাষে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। এছাড়াও এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলনও হয়েছে। কৃষকের হাতে উপযুক্ত সময়ে কৃষি উপকরণ ও পরামর্শ পাওয়ার কারণে লাভজনক আবাদ ভুট্টার চাষ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আশা করছি ভুট্টা চাষিরা অনেক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।