এস.এম.রকি, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা উপলক্ষে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উত্তরের জেলা দিনাজপুর খানসামা উপজেলার মৃৎ শিল্পীরা।
সরস্বতী পূজা আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে। এই পূজা উপলক্ষে উপজেলার মৃৎশিল্পীরা এখন বাঁশ, খড় ও কাঁদামাটি দিয়ে সরস্বতী প্রতিমা তৈরীর কাজ করছে। ইতিমধ্যে প্রতিমার কাঠামো ও মাটির কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে প্রতিমার রূপ ফুটিয়ে তোলার মূল কাজ। সামনে সপ্তাহে শুরু হবে রং-তুলির আঁচড় শেষে পুরোদমে প্রতিমা বিক্রি। এই বেচা-বিক্রি চলবে পূজা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত।
শুক্রবার (০৯ জানুয়ারী) সকালে সরেজমিনে উপজেলার পাকেরহাট হাসপাতাল রোড ও বিষ্ণুপুর সেন পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে। এখানে তৈরী হচ্ছে বিভিন্ন আকারের প্রতিমা। পছন্দের প্রতিমার অর্ডার দিতে চলছে ক্রেতাদের আনাগোনা।
জানা যায়, প্রতিমা তৈরীর সরঞ্জামাদির মূল্য বৃদ্ধিতে লাভ কম হলেও থেমে নেই মৃৎশিল্পীদের কাজ। সনাতন ধর্ম মতে বিদ্যার দেবী সরস্বতী। হিন্দু শিক্ষার্থীরা আশীর্বাদ লাভের আশায় প্রতিবছর পঞ্জিকা মতে মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী দেবীর পূজা করে থাকেন। এ হিন্দুধর্মবালম্বীদের বাড়িতে বাড়িতে নির্মাণ করা অস্থায়ী মন্দির। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূজা উদযাপনে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।
প্রতিমা তৈরীর কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আকারভেদে প্রতিটি প্রতিমা ৭০০-৩০০০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের দাম বেশী হওয়ায় কারিগররা তাদের দৈনিক হাজিরার টাকা লাভ করতে পারছে। এটা নিয়েই তাদের ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে।
সরস্বতী প্রতিমা অর্ডার দিতে আসা তিতাস সেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতি বছরে মত এবারও বাড়িতে সরস্বতী পূজা উদযাপন করব। তাই পছন্দের প্রতিমা ক্রয়ের জন্য অর্ডার দিতে এসেছি। বিদ্যার দেবীর পূজা-অর্চনা করতে স্কুল ও বাসায় আমাদের আয়োজনের কমতি নেই।
পাকেরহাট হাসপাতাল রোডের প্রতিমা তৈরীর কারিগর নরেশ রায় রায় বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে এই কাজ করছি। নিজের চলার মত উপার্জন হয়। তবে জিনিসপত্রের দাম বেশী হওয়ায় লাভ কম তবুও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন পূজায় প্রতিমা তৈরীর কাজ করছি।
বিষ্ণুপুর সেন পাড়া এলাকার মৃৎশিল্পী সবুজ সেন বলেন, যেকোনো পূজা আসলেই প্রতিমা তৈরীর জন্য আমাদের ব্যস্ততা বাড়ে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে মালামালের দাম বৃদ্ধি হলেও প্রতিমার দাম তেমন বৃদ্ধি হয়নি। এই কাজ শিখেছি লাভ কম হলেও প্রতিমা তৈরী করছি বলে তিনি জানান।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ধীমান চন্দ্র দাস বলেন, এই পূজা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে পালন করা হয়। তবুও পূজা ও পূজারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ইতিমধ্যেই সরকারী নির্দেশনা আমরা প্রচারণা শুরু করেছি।
ওসি খানসামা মোজাহারুল ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সরস্বতী পূজা পালনের লক্ষ্যে থানা পুলিশ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সেই সাথে পূজারীদেরও আহ্বান পূজা সম্পন্ন করেই যেন প্রতিমা বিসর্জন করে তারা।
ইউএনও মো: তাজ উদ্দিন বলেন, আনন্দমুখর পরিবেশে সরস্বতী পূজা উদযাপন করতে সকলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আশাকরি শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হবে।