শেখ খায়রুল ইসলাম, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : নদ-নদী ও পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা।
তারা বলেছেন, টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে দুর্যোগের ঝুঁকিতে উপকূলীয় জনপদের মানুষ।এরপর অবৈধ দখল, দূষণ,ভরাট ও ভাঙ্গনের কারণে নদী পাড়ের মানুষের জীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে।লবণাক্ততার কারণে এই দুর্ভোগ আরো বাড়ছে। নির্বাচিত হতে পারলে এই দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে তারা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।মঙ্গলবার সকালে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার মাহমুদ কাটীতে কপোতাক্ষ পাড়ে ‘নদ-নদী ও পরিবেশ সুরক্ষায় সংসদ সদস্য প্রার্থীদের অঙ্গীকার’শীর্ষক ভোটার- প্রার্থী মুখোমুখী অনুষ্ঠানের এ সব কথা বলেন তারা।‘ওয়াটারকিপার্স- বাংলাদেশ’,সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’,অনির্বাণ লাইব্রেরি,এবং ‘কোষ্টাল ভয়েস অব বাংলাদেশ’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল আমিন। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ রশীদুজ্জামান ও তৃণমূল বিএনপির মোঃ নাদির উদ্দিন। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল,শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, পাইকগাছা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ওবাইদুর রহমান,সিলেটের সুরমা রিভারকিপার আবদুল করিম কিম, কোষ্টাল ভয়েসের সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা জামাল পপলু ও সাধারণ সম্পাদক কৌশিক দে,সিনিয়র সাংবাদিক রকিব উদ্দিন পান্নু, পাইকগাছা প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি মোঃ আব্দুল আজিজ,অনির্বাণ লাইব্রেরির সভাপতি রহিমা আক্তার শম্পা ও সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দেবনাথ,কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন প্রমূখ।অনুষ্ঠানে উত্থাপিত প্রস্তাবনায় বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ বিশেষ এলাকা ঘোষণা করতে হবে। ওই জনপদের সুরক্ষা ও উন্নয়নে প্রতি অর্থ-বছরে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।টেকসই উন্নয়নের জন্য উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে।নিরাপদ খাবার পানির স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করতে হবে।দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় এলাকায়‘একটি বাড়ি একটি খামার’প্রকল্পের আদলে ‘একটি বাড়ি একটি শেল্টার হোম’,কার্যক্রম শুরু করতে হবে।উপকূলের রক্ষাকবচ বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে উপকূলে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে।ওই সকল প্রস্তাবনার সঙ্গে একমত প্রকাশ করে মোঃ রশীদুজ্জামান বলেন,আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে দীর্ঘ দিন পুরো উপকূলীয় অঞ্চল অবহেলিত ছিলো।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ওই অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।টেকসই বেড়িবাধ নির্মাণ,সুপেয় পানি ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে কপোতাক্ষ- শিবসাসহ অন্যান্য নদ-নদী রক্ষায় কাজ চলছে। আগামীতে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের উপকূলের পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তৃণমূল বিএনপি নেতা মোঃ নাদির উদ্দিন বলেন, আমরাই আমাদের পরিবেশ দুষণ করছি।যে কারণে পরিবেশগত সংকট বাড়ছে।পাইকগাছা-কয়রার মানুষের সমস্যা সংকট নিরসনে আমরা প্রার্থী হয়েছি।জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পাশাপাশি আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি ওয়াটাকিপার্সের শরীফ জামিল বলেন,ক্রমেই রুগ্ন হচ্ছে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও কবি মাইকেল মধুসুদন দত্তের স্মৃতিধন্য কপোতাক্ষ নদ।আর প্রবল খরস্রোতা শিবসা নদী এখন পলি জমে ভরাট হয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। জেগে উঠছে বিশাল চর।শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও মুনষ্য সৃষ্ট নানা কারণে সারাদেশের ন্যায় দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীগুলো অস্তিত্ব সংকটে ভূগছে।ফলে নদী পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা,সম্পদ,খাদ্য, পানি,বাসস্থানসহ অন্যান্য সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।এই সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।