চিলাহাটি ওয়েব ডেস্ক : নীলফামারীর সৈয়দপুরের হোটেল-রেস্তোরাঁয় প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয় মনসুরী মিঠাই। বেসন, ছোলার ডাল আর চিনি দিয়ে বানানো এই মিষ্টি সংরক্ষণ করা যায় বেশ কয়েক দিন। ফলে কয়েক দিন ঘরে রেখে খাওয়ার জন্য অনেকেই এই মিষ্টি কিনেন।
সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট রেলকলোনির বাসিন্দা মো. ভোলার দাবি, তিনি বংশপরম্পরায় মনসুরী মিঠাইয়ের কারিগর।
তিনি ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর বিহারিঅধ্যুষিত জনপদ সৈয়দপুরে চলে আসেন। ভারতের বিহার রাজ্যের মুঙ্গের জেলার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। সৈয়দপুরে তিনিই প্রথম মনসুরী মিঠাই বানিয়েছেন। পরে অন্যরা এই মিষ্টি বানাতে শুরু করেন। এভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায় এই মিষ্টি। ভোলা বলেন, মনসুরী মিঠাই বানাতে প্রয়োজন হয় বেসন, ছোলার ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল। প্রথম যখন মনসুরী মিঠাই বানাতেন তখন ঘিয়ে ভাজতেন। বানানোর সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি হয়ে যেত। এখন ঘিয়ের বদলে সয়াবিন তেলে ভাজা হয় এই মিষ্টি।
সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে অবস্থিত দিলকুশা মিষ্টি ভান্ডার। পাকিস্তান আমলে এটার নাম ছিল দিলকুশা সুইটমিট। এর মালিক কামরুদ্দিন এসেছিলেন বিহার থেকে। ২০০৪ সালে মারা যান তিনি। এখন এই দোকান চালান তাঁর একমাত্র ছেলে মো. কাওসার। তিনি বলেন, ‘যত দূর জেনেছি, মনসুরী মিঠাই প্রথম দিল্লিতে তৈরি হয়।
মোঘল সম্রাটদের পাতে থাকত এই মিষ্টান্ন। আফগানিস্তানের কাবুলের একজন ময়রার নাম ছিল মনসুর পাঠান। তাঁর নামেই এই মিষ্টির নাম মনসুরী। তবে এ নিয়ে ভিন্ন মতও আছে।’
সৈয়দপুরের পাহলয়ান সুইটসের স্বত্বাধিকারী সখেন ঘোষ বলেন, মনসুরী মিঠাই কম দামের মিষ্টি। সবকিছুর দাম বাড়লেও এখনো এই মিষ্টি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সৈয়দপুরে শতাধিক রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ মণ মনসুরী মিঠাই তৈরি হয়। স্থানীয় ক্রেতার পাশাপাশি আশপাশ থেকে আসা পাইকারেরা মনসুরী মিঠাই কিনে নিয়ে যান। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলাতেও এটার ক্রেতা আছে।
শহরের শহীদ তুলশিরাম সড়কে অবস্থিত নাটোর দই ঘরে আসা ক্রেতা মতিয়ার রহমান বলেন, সৈয়দপুরে অনেক ভালো মিষ্টির শোরুম হচ্ছে। নতুন নতুন নানা পদের মিষ্টি আসছে। কিন্তু মনসুরী মিঠাইয়ের কোনো পরিবর্তন নেই। মানুষ এখনো এই মিষ্টি আনন্দ নিয়ে খায়।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিলকিস আরা বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েরা ঢাকায় থাকে। এখান থেকে কেউ গেলে মনসুরী মিঠাই পাঠানোর কথা বলে তারা। আমি সেভাবে মনসুরী মিঠাই পাঠাই।’
সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, সৈয়দপুরের ঐতিহ্য মনসুরী মিঠাই টিকিয়ে রেখেছেন হোটেল মালিক ও কারিগরেরা।
সৈয়দপুরে বিয়েবাড়ি কিংবা মিলাদ মাহফিলে মনসুরীর কদর থাকে সবচেয়ে বেশি। প্রয়োজনে কারিগরদের সহযোগিতা দিয়ে ঐতিহ্যবাহী মনসুরী টিকিয়ে রাখার চিন্তাভাবনা চলছে বলে তিনি জানান।