Type Here to Get Search Results !

সংস্কার হচ্ছে মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি

চিলাহাটি ওয়েব ডেস্ক : সংস্কার করা হচ্ছে বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি। বাড়িটি পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর এলাকায় অবস্থিত। বাড়িটির মূল অবয়ব ঠিক রেখে সংস্কার করা হচ্ছে। সম্প্রতি পাবনা জেলা প্রশাসক আসাদুজ্জামান সংস্কার কাজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, প্রতিদিনই দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অসংখ্য দর্শানার্থী বাড়িটি দেখার জন্য আসেন। বাড়িটির প্রতি সংস্কৃতি প্রেমীদের গভীর ভালবাসা ও আবেগ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, সরকারের কাছে সংগ্রহশালা করার যে প্রস্তাব রয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য করণীয় নির্ধারণ করা হয়। বাড়িটিকে ঠিক রেখে বর্তমানে সংস্কারের জন্য এনডিসি মোহাম্মহদ আবুল হাছানাত এবং পরিষদের পক্ষ থেকে ড. নরেশ মধুকে সহযোগিতার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, তৎকালীন বৃহত্তর পাবনার (বর্তমান সিরাজগঞ্জ) বেলকুচি উপজেলার সেন ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামে ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল জন্ম নেন সুচিত্রা সেন। পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের একতলা পাকা পৈত্রিক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের শিশুকাল, শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তার বাবা করুনাময় দাশগুপ্ত পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করতেন। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিনী। দু’বোনের মধ্যে সুচিত্রা সেন ছিলেন বড়। ছোট বোন হেনা দাশগুপ্ত। 
শহরের মহাকালী পাঠশালায় পড়ালেখা শেষে সুচিত্রা সেন স্থানীয় পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। পাবনা শহরের নানা অনুষ্ঠানে গান গাওয়া ও নাটক থিয়েটারে তিনি অভিনয়ে দক্ষতা দেখান। তার পারবারিক নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের কয়েক মাস আগে তার বাবা করুণাময় দাসগুপ্ত পাবনার বাড়ি-ঘর, চাকরি সবকিছু ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যান। সুচিত্রা সেনও পরিবারের সঙ্গে চলে যান। কলকাতা যাওয়ার বছর দু’য়েক পরেই সেখানকার বনেদি পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে রমা দাশগুপ্তের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ঘর সংসারের পাশাপাশি সিনেমায় অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সিনেমায় অভিনয় শুরু পর নাম হয় সুচিত্রা সেন। বিয়ের আড়াই বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ নামের একটি বাংলা ছবিতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। অজ্ঞাত কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি।
এরপর ১৯৫৩ সালে নায়িকা হয়ে তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদি’ ছবিটি মুক্তি পায়। ১৯৫৩-১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছর সুচিত্রা সেন একটানা বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেন। স্বামী দিবানাথ সেনের প্রবল আপত্তি থাকলেও সুচিত্রা সেন মনের তাগিদে নিজেকে অভিনয়ে জড়িয়ে রাখেন। ‘সাত নম্বর কয়েদি’ ছবির পরিচালক ছিলেন সুকুমার দাশগুপ্ত। তারই একজন সহকারী পরিচালক নীতিশ রায় এ ছবিতে অভিনয় করার পর ছবি মুক্তির সময় রমা নাম বদলে নাম দেন ‘সুচিত্রা সেন’। এরপর থেকেই কিশোরী বেলার বান্ধবীদের রমা বাবা-মায়ের দেওয়া নাম রমা দাশগুপ্ত থেকে স্বামীর পদবি নিয়ে রমা সেন সবশেষে স্বপ্নসুন্দরী সুচিত্রা সেন হয়ে যান। সুচিত্রা সেন বাংলা ৫৬টি ও ৭টি হিন্দি মিলে মোট ৬৩টি ছবিতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছেন।
উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি হয়ে বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। ১৯৭৮ সালে উত্তম কুমার মারা গেলে সিনেমায় অভিনয় বন্ধ করে দেন।
১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন ‘সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস’ জয় করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ভারত সরকারও তাকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করেন।
২০০৫ সালে তাকে দাদা সাহেব ফলকে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তায রাখলে তিনি জনসমক্ষে আসতে চাননি বলে তা গ্রহণ করেননি। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান বঙ্গবিভূষণ দেওয়া হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি দেবদাস ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন, যা ছিল তার প্রথম হিন্দি ছবি। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি ভারতে মারা যান।
 
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ