চিলাহাটি ওয়েব, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বের প্রাচীনতম জাতীয় সংবাদপত্রটি শুরু হওয়ার প্রায় ৩২০ বছর পর তার শেষ দৈনিক সংস্করণটি ছাপিয়েছে। ভিয়েনাভিত্তিক সংবাদপত্র উইনার জেইতুং আর তার দৈনিক সংস্করণ ছাপবে না। মুদ্রণ ব্যবসায় লাভের মুখ না দেখতে পেয়ে পথ চলা বন্ধ করলো তারা।
বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত নয়া আইন পাস করে অস্ট্রিয়ার সরকার। সেখানে পত্রিকা ও সংবাদপত্রে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়। সরকারি গেজেট প্রকাশের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পায় উইনার জেইতুং। ফলে সরকারের তরফে বিজ্ঞাপন বাবদ পাওয়া বিপুল আয়ের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। এই আইন পরিবর্তনের ফলে প্রকাশকের আনুমানিক ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতি হয়েছে।
Der Spiegel এর মতে, কাগজটি তার সম্পাদকীয় কর্মীদের সংখ্যা ৫৫ থেকে ২০ তে কমিয়ে এনেছে। ৬৩ জন কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শুক্রবার অর্থাৎ ৩০ জুন অস্ট্রিয়ার এই খবরের কাগজের সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশ করা হয়।
তবে এর অনলাইন সংস্করণ চালু থাকবে। পাশাপাশি একটি মাসিক মুদ্রণ চালিয়ে যাবার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যদিও সেই পরিকল্পনাটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। পত্রিকাটি, অস্ট্রিয়ান সরকারের মালিকানাধীন কিন্তু সম্পাদকীয়ভাবে স্বাধীন।
১৭০৩ সালের আগস্টে এটি সংবাদপত্র প্রকাশ করা শুরু করে। ১২ জন প্রেসিডেন্টের শাসনকালের পাশাপাশি ফরাসি বিপ্লব, অ্যাডলফ হিটলারের উত্থান বা দু'দুটো বিশ্বযুদ্ধ সবেরই সাক্ষী থেকেছে এই প্রাচীনতম সংবাদপত্র।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রিয়া পরাজিত হলে, কাগজটি শেষ হ্যাবসবার্গ সম্রাট কায়সার কার্লের ত্যাগপত্রের সাথে একটি বিশেষ সংস্করণ প্রকাশ করে। তার শেষ দৈনিক মুদ্রণ সংস্করণে 'উইনার জেইতুং' সম্পাদকীয় প্রিন্ট চালানোর সমাপ্তির জন্য সরকারের নতুন আইনকে দায়ী করে লিখেছে, মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা ঝড়ের মুখেৃ আরও বেশি সংখ্যক প্ল্যাটফর্ম এসে যাওয়ায় নকল বিষয়বস্তুর সাথে লড়াই করে খবর করতে হচ্ছে ।
এপ্রিল মাসে এর মাত্র ২০,০০০ সংস্করণ ছাপা হয়, যদিও সপ্তাহান্তে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। শেষ সংস্করণে প্রাক্তন অস্ট্রিয়ান চ্যান্সেলর ফ্রাঞ্জ ভ্রানিটজকি এবং উলফগ্যাং শুসেলের সাথে আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের চূড়ান্ত সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয় ।
ইইউ কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভেরা জোরোভা অস্ট্রিয়ান বার্তা সংস্থা এপিএকে বলেছেন যে, তিনি সংবাদপত্রের এই পরিস্থিতি দেখে খুশি নন। বছরের পর বছর ধরে মানুষের কাছে খবর পৌঁছে দেবার ক্ষেত্রে উইনার জেইতুং এর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন তিনি। তিন শতাব্দীর মুদ্রণের মাঝে সংবাদপত্রটি শুধুমাত্র একবার বিরতি নেয়। অস্ট্রিয়া হিটলারের জার্মানিতে অন্তর্ভুক্ত হবার পর ১৯৩৯ সালে নাৎসিরা কাগজটি বন্ধ করে দেয়।
১৯৪৫ সালে এটি আবার মুদ্রণ শুরু করে।
১৬৬৪ সালে প্রথম প্রকাশিত বিশ্বের প্রাচীনতম সংবাদপত্র Gazzetta di Mantova বা ১৬৬৫ সালে প্রকাশিত যুক্তরাজ্য সরকারের একটি সরকারি গেজেট 'লন্ডন গেজেট' এর সাথে উইনার জেইতুং এর নাম একসঙ্গে নেয়া হয়। এখনো পর্যন্ত টিকে থাকা বিশ্বের প্রাচীনতম জাতীয় সংবাদপত্র হলো জার্মান প্রকাশনা সংস্থার হিলডেশেইমার অ্যালজেমেইন জেইতুং , যা ১৭০৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান