ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর(দিনাজপুর)প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় মাহালি পরিবারের করুন অবস্থা, এর একমাত্র কারণ বাঁশের তৈরি শিল্পের প্রতি বর্তমানে মানুষের অনিহা।
সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, বাঁশ চাষে বিমূখতা ও প্লাসটিকের দৌরত্ব এবং পরিকল্পিত উদ্যোগ না থাকায় দিন দিন বিলুপ্ত হতে চলেছে দিনাজপুর জেলার বিরামপুরে বাঁশের তৈরী শিল্প।
একসময়ে বাঁশ শিল্প বাঙ্গালি সংস্কৃতির একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হতো। সেই সময়ে বাঁশ দিয়ে ঘরের নিত্যদিনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। তখন এসব জিনিসপত্রের কদরও ছিল ভালো।
সরেজমিনে বিরামপুরের হাটে গিয়ে বাঁশের তৈরী পণ্য বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানাযায়, বর্তমান পণ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এক কালের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বাংলার এই শিল্প। অপরদিকে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অভাব-অনটনের মধ্যে দিনযাপন করছেন বাঁশের তৈরী শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবার গুলো। পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে তারা এ পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মটি দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একসময় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রামে বাঁশ দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, ডুলি, টুকরি, ওড়া, চালুনি, মাছ রাখার খালই, মাছ ধরার চাই, দারকি, বানা, ঝুড়ি, ফুলের টব ও হাঁস-মুরগি-কবুতরের খাঁচা, বসার মোড়াসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হতো। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে সামিল হতো। এসব তৈরী পন্য হাটবাজার এমনকি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের সল্পতা, মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশের কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে গ্রামীণ কারিগররা।
বিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম গুলোতে বড় বড় বাঁশ বাগান দেখা গেলেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।
বিরামপুর সরকারি কলেজের পাশে মাহালি পাড়ার দিলীপ মাহালি জানান, বাঁশের তৈরির জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো ব্যবহার হয় না। প্লাস্টিক পণ্যের উপর ঝুঁকছে মানুষ। ফলে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। বাঁশ শিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।একসময় প্রতিটি বাড়িতেই বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিল। চাহিদাও ছিল ব্যাপক। রমরমা ব্যবসা ছিল সেই সময়। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। ফলে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।
বাঁশের পন্য ক্রয় করতে আসা মহিউদ্দিন জানান, বাঁশ শিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বরংচ পরিবেশ দুষনকারী প্লাস্টিক পন্যেকে উৎসাহিত করা হচ্ছে প্লাস্টিকের পন্য অধিক হারে ব্যবহারের ফলে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।পরিবেশ বান্ধব বাঁশ শিল্পে সরকারী উদ্যোগ ও পৃষ্ট পোষকতা না থাকায় একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে অন্য দিকে প্লাস্টিকের অবাধ ব্যহারে পরিবেশ মারাত্বক ভাবে দুষন হচ্ছে । এই পেশার সাথে জরিত দিলীপ মাহালি জানান শত প্রতিকূলতার মাঝেও পুরোনো পেশা ধরে রাখতে হয়েছে।