আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত প্রায় গাছগুলোর মধ্যে তুঁতগাছ অন্যতম। এ গাছের ফলের সঙ্গে অনেকের শৈশব স্মৃতি বিজড়িত থাকে। লাল কালো বর্ণের হালকা টক মিষ্টি এ তুঁতফল।
উপকারী হলেও বর্তমানে এ ফলকে সংগ্রহ কিংবা সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়না। আগে গ্রামের রাস্তার দুইপাশে তুঁতফলের গাছ লাগানো হতো। রাস্তা সম্প্রসারণ কিংবা বিভিন্ন কারণে নির্বিচারে কাটা হয়েছে এসব গাছ। পরবর্তীতে আর লাগানো হয়নি উপকারী এ ফলের গাছটি। যার ফলে ক্রমশই কমে যাচ্ছে তুঁতগাছের সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ তুঁতফল নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর। ডায়াবেটিস বা ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে এ তুঁতফল। বিভিন্ন শহর কিংবা গ্রাম কোথাও আর আগের মতো তুঁতগাছের দেখা মেলে না। তবে দিনাজপুর অঞ্চলে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের রেশম বীজাগারের অধীনে জেলা শহরের মাহুতপাড়া এলাকায় একটি বিশাল তুঁত বাগান রয়েছে।
রেশম বীজাগার সূত্রে জানা, এ বাগানে প্রায় ১১৮ একর জমিতে তুঁতগাছ ও চারা উৎপাদন করা হয়, যা রেশম গুটি উৎপাদনকারী পোকার খাদ্য সরবরাহের জন্য লাগানো হয়েছে।
রেশম পোকা এই গাছের পাতা খেয়ে গুটি উৎপাদন করে থাকে। তবে তুঁতফল সংগ্রহ কিংবা সংরক্ষণ নিয়ে রেশম বীজাগারের কোনো উদ্যোগ নেই। তুঁত বাগানে ফল খাওয়ার সময় কথা হয় দিনাজপুর উলিপুর এলাকার সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে।
তিনি জানান, তুঁত ফলের মৌসুমে একবার হলেও ফল খেতে আসি। ছোট বেলায় তো রাস্তার পাশে থাকা তুঁতগাছ থেকে অনেক তুঁতফল খেতে পারতাম। কিন্তু এখন তো আর আমাদের ওদিকে তেমন তুঁতগাছ নাই। এ ফল খাওয়ার সময় শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে। তাই এখানে ফল খেতে আসি। শুনেছি এ ফল খাওয়ার উপকারও আছে। মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরাও এ ফল খেয়ে থাকে।
সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে এই গাছের চারা রোপণ উপযোগী। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে এই গাছে ফল ধরে। যা পরবর্তীতে এক মাসের মধ্যে পাকতে শুরু করে। তুঁতফল প্রথম অবস্থায় সবুজ, পরে হালকা গোলাপি, লাল এবং সম্পূর্ণ পাকলে কালচে লাল রঙ ধারণ করে।
তুঁতফল বা মালবেরি ফলের আদিবাস চীনে। তবে ভারত, বাংলাদেশসহ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে তুঁতফলের চাষ হয়ে থাকে। যা দিয়ে বিভিন্ন প্রকার জুস ও জেলি তৈরি করা হয়।
১৯৮০ সালের পরে কোনো ধরনের বেসরকারি সংস্থাকে নিবন্ধন পেতে হলে সর্বপ্রথম শর্ত ছিল তুঁতগাছ রোপণ করতে হবে।
মূলত, রেশমকে প্রাধান্য দিতেই তৎকালীন সরকারের এই পদক্ষেপ ছিল। এই নিয়মটি ছিল বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত। কিন্তু এখন আর এই শর্ত নেই। তাই গ্রামের রাস্তাঘাটে এ গাছ আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। ফলে দেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে এই ফলের গাছ।