Type Here to Get Search Results !

পীরগঞ্জে প্রথম শহিদ মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন পূরণ হয়নি : পরিবারে ক্ষোভ

শেখ সমশের আলী, পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : ১৯৭১ সালে জীবনের ঝুকি নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পীরগঞ্জ উপজেলার বিরহলী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইসাহাক আলী প্রথম শহিদ হন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে জাতি পেয়েছে নির্দিষ্ট ভুখন্ড ও লাল সবুজের পতাকা। সেই দিক থেকে পীরগঞ্জের প্রথম শহিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইসাহাক আলীর জীবন স্বার্থক হয়েছে। কিন্তু তার পারিবারিক জীবনের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও শহিদ আবু ইসাহাক এর স্ত্রী সালেহা বেগম ও একমাত্র কন্যা মোছাঃ ইসমত আরা বেগম এর পিতার মৃত্যুর শোকের ছায়া এখনও পর্যন্ত হৃদয় থেকে ম্লান হয়নি। যুদ্ধে যাওয়ার সময় আবু ইসাহাক এর স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। যুদ্ধে যাওয়ার সময় আবু ইসাহাক স্ত্রী সালেহা বেগমকে বলেছিলেন ২/৩ দিন পর সন্তান হবে আমি যুদ্ধে গেলাম, যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে এবং দেশ স্বাধীন করে লাল সবুজের পতাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসব এবং সন্তানকে নিয়ে ছবি তুলব। অথচ তিনি যুদ্ধে গেলেন, এদিকে ২ দিন পর সন্তান ভুমিষ্ট হলো, তিনি আজও ফিরে এলেন না বাড়িতে। তার সন্তানকে নিয়ে ছবি তোলার স্বপ্ন তার পূরণ হলো না। 
১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ আবু আলী ইসাহাক দিনাজপুর জেলার তৎকালীন ইপিআর (ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) ক্যাম্প আক্রামণ করতে গিয়ে পাক হানাদার বাহিনীদেরকে সায়েস্তা করার জন্যে তিনি ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প আক্রমণ করেন। পাক হানাদার বাহিনী ও শহিদ আবু ইসাহাক এবং তার সঙ্গীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর সরাসরি বন্ধুক যুদ্ধ হয়। ওই বন্দুক যুদ্ধে শহিদ আবু ইসাহাক আলী মর্মান্তিক ভাবে নিহত হয় এবং তিনি পীরগঞ্জ উপজেলার প্রথম শহিদ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পান। 
এই মহাবীর, দুঃসাহসী ও প্রকৃত দেশ প্রেমিক, শহিদ আবু ইসাহাক এর লাশ দিনাজপুর জেলা থেকে এনে পীরগঞ্জ সরকারি হাসপাতাল সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে পীরডাঙ্গী কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় ভাবে তার সমাধি সংরক্ষণ করা হয় এবং ওই হাসপাতাল সড়কটি তার নামে নাম করণ করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ আবু ইসাহাকের যে অবদান ছিল তা পীরগঞ্জের মানুষের কাছে কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
অথচ মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও শুধু ভাতা ছাড়া শহিদ আবু ইসাহাকের স্ত্রী সালেহা বেগম ও একমাত্র কন্যা আছিয়া ওরফে মোছাঃ ইসমত আরা বেগম রাষ্ট্রীয় ভাবে কোন সুযোগ সুবিধা অদ্যাবধি পায়নি। ইসমত আরা মা সালেহা বেগম কঠোর দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে ডাল ভাত খেয়ে কখনও কখনও অনাহারে থেকেই মেয়ে ইসমত আরাকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস পর্যন্ত লেখা পড়া করিয়েছেন। পরবর্তীতে ইসমত আরা অর্থের অভাবে আর লেখাপড়া করতে পারেনি। আজও শহিদ আবু ইসাহাক এর স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা ইসমত আরা দারিদ্রতা, দুঃখ, বেদনা ও আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে। তবুও তার পিতা যেন পরোপারে ভালো থাকেন এই দোয়া করার সময় ইসমত আরা বুধবার এই সংবাদদাতার উপস্থিতিতে কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ইসমত আরা ও তার মা তাদের করুন জীবনের কিছুটা সান্তনা দেওয়ার জন্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য কন্যা দেশ বরেণ্য নেত্রী মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি কামনা করেছেন।    
বিভাগ