আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : “ও বউ ধান বানে রে ঢেঁকিতে পা দিয়া, ঢেঁকি নাচে বউ নাচে হেলিয়া দুলিয়া , ও বউ ধান বানে রে” গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহী লোকজ গানটি আর তেমন শোনা যায় না। চোখে পড়ে না আর ঢেঁকিতে পাড় দিতে দিতে গ্রামিণ বউদের এই গান গাওয়ার দৃশ্য। কালের পরিবর্তনে গ্রাম- বাংলা থেকে এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন ঢেঁকির কদর গ্রাম-বাংলার কৃষকদের বাড়ি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। হাতে গোনা কিছু কৃষকদের বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি এখনও চোখে পড়ে। কিন্তু তাও জরাজির্ণ হয়ে আছে। চলছে না এর কোন কার্যক্রম। ঢেঁকিতে চাল ছাটার গুনাবলীর মধ্যে অনেক গুন আছে। ঢেঁকিতে ছাটা চাল পুষ্টিতে ভরা থাকে। চালের উপর যে লাল আবরণ থাকে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। ঢেঁকিতে পাড় দিলে এক ধরণের কায়িক পরিশ্রম হয় যা স্বাস্থের্য জন্য ব্যয়ামের একটি অংশ এবং উপকারি।
বর্তমান সময়ে মানুষ ধান, চালের আঁটা ও চিড়া ভাঙানোর জন্য বৈদ্যুতিক মিল হওয়ায় কৃষকরা সহজেই ধান, আঁটা ও চিড়া কম সময়ে ও কম খরচে ভাঙাতে পারছেন। তাই এখন আর বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি রাখছেন না কৃষকরা। তারা বৈদ্যুতিক মিলের উপড় নির্ভর হয়ে পড়ছে। ঢেঁকিতে বানা ধানের চাউলের ভাত, খিচুড়ী , খিড় ও চিড়া স্বাদ ও ভিটামিনে ভরপুর।
আগের দিনে কৃষকদের বাড়ির বউদের অনেক কষ্ট করে ধান ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ভাঙানোর পর চাল ও চিড়া তৈরী হত। ধান ভাঙানোর বৈদ্যুতিক মিল হওয়াই কৃষকদের বাড়ির বউদের আর কষ্ট করে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান ভেঙে চাল, আঁটা ও চিড়া তৈরী করা লাগছে না। এই ঢেঁকি নিয়ে অনেক কবি, সাহিত্যিকরা যুগে যুগে অনেক কবিতাও লিখেছেন। তাই ঢেঁকির গুণ সম্পর্কে প্রবাদ বাক্য রচনা করেছেন গুণিজনেরা যে, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান বানে। বর্তমানে গ্রামের দু’একটি কৃষকদের বাড়িতে হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি দেখা যায়। কিছু দিন পরে গ্রামের কৃষকদের বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আর দেখা যাবে না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে গ্রাম- বাংলার শত বছরের এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি। এমন এক সময় আসবে যখন আগামী প্রজন্মের কাছে এই ঢেঁকি শুধুই কাল্পনিক জগতের এক কল্পকাহিনীর গল্প মনে হবে।
নীলফামারী জেলার চিলাহাটির খগোবালা এই ঢেঁকি সম্পর্কে চিলাহাটি ওয়েব ডটকম কে বলেন, তিনি এখনও এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি ধরে রেখেছেন। তিনি প্রায় ১২ বছর যাবৎ এই ঢেঁকিতে ধান, আঁটা ও চিড়া ভেঙে আসছেন। এলাকার বিভিন্ন লোকেরা আঁটা ভেঙে নেওয়ার জন্য তার কাছে আসে। এর বিনিময়ে তিনি প্রতি কেজি চালের আঁটার জন্য ৭-৮ টাকা করে নেন। এতে তার মাসে ভালো টাকা আয় হয় এবং নিজেদেরও প্রয়োজন পূরণ হয়।
ঢেঁকির গুন সম্পর্কে তিনি বলেন, ঢেঁকিতে পাড় দিলে শরীরের ব্যায়াম হয়, ঢেঁকিতে ছাঁটা চাল প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ। তবে বৈদ্যুতিক মিল হওয়াতে লোকেরা আর আগের মত তার কাছে আসে না।হাতের কাছে বিভিন্ন যন্ত্র ও প্রযুক্তির ব্যবহার সহজলভ্য হওয়ায় ঢেঁকির মতো ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় হয়তো প্রাচীন এই যন্ত্রগুলির দেখা মিলবে কেবল যাদুঘরে।