আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা, রোপণ ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে নীলফামারী জেলার চিলাহাটির বাঁশ ও বেত ঝাড় উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ফলে এলাকা থেকে বাঁশ-বেতনির্ভর শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।
একসময় গ্রামের
হাটবাজারগুলোতে নানান ধরনের বাঁশের তৈরি শিল্প বিক্রি হতো। যেমন কুলা,
ডালা, টুপরি, কুড়ি চালুন, তালাই টেমাই, জোলঙ্গাসহ মাছ ধরার বিভিন্ন
সামগ্রী, মই, খেলনা ও বিভিন্ন শৌখিন দ্রব্যসামগ্রী।
এছাড়া এলাকায়
কাঁচা ঘর তৈরিতে বাঁশের খুঁটি, বেড়া, ঘরের দরজা ইত্যাদি উপকরণ দরকার হয়। আর
বেত দিয়ে তৈরি হয় ঢাকি, কাটা, দাঁড়িপাল্লা, ছোট ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন
খেলনাসামগ্রী। আধুনিকের ছোঁয়ায় এ শিল্প এখন বিলুপ্তর পথে। গ্রামের
হাটবাজারগুলোতে বাঁশের তৈরি শিল্প আগের মতো চোখে আর পড়ে না। এ শিল্পের
সঙ্গে জড়িত থাকা পরিবারগুলো এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
চিলাহাটি
বাজারে বাঁশের তৈরি শিল্প বিক্রি কালে কেতকীবাড়ী ইউনিয়নের বোতলগঞ্জ গ্রামের
শ্যামল হাজেরা চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে বলেন, বাপ-দাদার আমলের এই পেশাকে বুকে আঁকড়ে ধরে রেখেছি।
দেড় শতক খাস জমির ওপর বসতবাড়ি তৈরি করে পরিবারের আটজন সদস্য রাত-দিন খেটে
যা তৈরি করি হাটবাজারে সে তুলনায় বিক্রি নেই। সরকারি ভাবে কোনো সাহায্যে
সহযোগিতাও পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, অনেক দুঃখ কষ্টে দিন কাটছে
আমাদের। অভাবের তাড়নায় গোত্রের অনেকেই অন্য পেশায় চলে গেছে। উপযুক্ত কাজ
এবং অভিজ্ঞতার অভাবে আমরা অন্য পেশায় যেতে পারিনি।
ওই গোত্রের হরেন
হাজেরা চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে বলেন, পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি।
আমাদের গোত্রের ২/৩টি পরিবার ছাড়া সবাই পেশা পরিবর্তন করেছে। এক সময়
বিস্তীর্ণ পল্লীতে বাঁশ ও বেত ঝাড় থাকায় বাঁশের তৈরি শিল্পের প্রচুর
ব্যবহার ছিল।
এই বাঁশ-বেতের ওপর নির্ভর করে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে বাঁশের
তৈরি শিল্পরও প্রচুর চাহিদা ছিল। কিন্তু আগের মতো বাঁশ ঝাড় বেত ঝাড় এখন আর
চোখে পড়ে না। এর দুষ্প্রাপ্যতার কারণে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতির
চালিকা শক্তি কুটির শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি নিঃস্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট
পেশাজীবী পরিবারগুলো।