চিলাহাটি ওয়েব,ঢাকা অফিস : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে উপহারের ঘর নির্মাণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণ ত্রুটির কারণে বৃষ্টি হলেই টিনের চালা দিয়ে ঘরের ভেতরে পানি পড়ে।
ভাতাভোগীদের অভিযোগ, এই নির্মাণ কাজের শুরু থেকে নিম্নমানের ইট, বালু, সিমেন্ট, রড দিয়ে এ ঘর তৈরি করা হয়েছে । তাই এ উপহারের ঘর থাকতে চাচ্ছেন না অনেক উপকারভোগী।
সরজমিনে উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের ভাগলপুর মৌজার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ১৯ টি ঘর নির্মাণ করা হয়। তবে নির্মাণের কিছুদিন পর থেকেই ঘরগুলোগুরোর টিনের চালা ফুঁটো হয়ে পানি পড়তে থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়ে উপকারভোগীরা। উপহারের বাড়িতে অনেকেই থাকতে চাচ্ছেন না কিংবা অনেকেই নেই কেন?
এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন উপকারভোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘সিমেন্ট বালু কম দিয়ে বাড়ি নির্মান, চলাচলার রাস্তা না থাকা, টিনের চালা দিয়ে পানি পড়া ও কাজের কোন ব্যবস্থা না থাকা অর্থাৎ কর্মসংন্থান থেকে বাড়ি দূরে হওয়ায় বাড়িতে থাকছে না।’
শাহানারা নামে এক উপকারভোগী অভিযোগ করে বলেন,‘আমাকে যে ঘর দেয়া হয়েছে। তা নিম্নমানের ইট, বালু, সিমেন্ট, রড দিয়ে এ ঘর তৈরির কিছুদিন পর থেকেই ভাঙছে। আর ঘরের টিনের চালা ফুটো হয়ে পানি পড়ছে। বৃষ্টি হলেই ঘরে শুয়ে থাকা যায়না। এজন্য যতক্ষণ বৃষ্টি হয়। দাড়িয়ে থেকে সময় পার করতে হয়। এমনো সময় গেছে রাতে ঘুমাচ্ছি। এসময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই দেখছি। মাথায় পানি পড়ছে। এসময় ঘুম থেকে উঠে বিছানার বিভিন্নস্থানে পাতিল রাখতে হয়েছে। যেন বিছানায় পানি না পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, আমার ঘরে একটি দেওয়াল কিছুদিন পরেই ভেঙে গেছিল। আমার স্বামী সেটাকে ভেঙে নতুন করে ফের নির্মাণ করেছেন। আমাদের ঘর পেয়ে কোন উপকার হয়নি। গরীবের কষ্ট কষ্টই রয়ে গেছে।
ওলিমন নামে আরও এক উপকারভোগী বলেন, ‘ঘরে সিমেন্ট, বালু নিয়ম মেনে দেওয়া হয়নি। আমর ঘরের দেওয়ালে পেরেক ঠুকেও মশারি টানাতেও পারিনা। সিমেন্টসহ পেরেক উঠে চলে আসে। আপনি বলেন, তাহলে কি? নিয়ম মেনে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
আর বৃষ্টি হলে তো অর্ধেক বৃষ্টির পানি ঘরের মধ্যেই পড়ে। আমরা ঘুমাব কি করে। আর এ ঘর পেয়ে আমাদের লাভ হলোটা কি?
তিনি আরও বলেন, ‘এই স্থানটাও ঘর নিমার্ণের যোগ্য না কারণ বৃষ্টির দিনে পয়ঃনিষ্কাশন কোন ব্যবস্থা নেই। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি চলে আসে। সমস্যার কথা আর বলব কত বাপু, বৃষ্টি হলে আমাদের পায়খানার মল ঘরের মধ্যে চলে আসে। কিভাবে এই বাড়িতে বাস করা যায়’।
সাইফুদ্দিন, ববিতা রানি সহ আরও কয়েকজন উপকারভোগী অভিযোগ করেন, ‘আমরা খুব কষ্টে আছি। আমাদের দেখার কেউ নাই। যদি দেখার কেউ থাকত। তাহলে এইযে ঘরে টিনের চালা ফুটো হয়ে পানি পড়ে। সরকার থেকে ঠিক করে দিত। ঘরে পানি পড়ার ভয়ে অনেক টিনের নিচে পলেথিন দিয়েও রেখেছি । তবে বেশি পানি হলে সেই পলেথিন ফুটো হয়েও পানি পড়তে থাকে। তাই বৃষ্টির দিনে আমরা ঘুমাতে পারিনা। আর একটু বৃষ্টি হলেই আশপাশেসহ ঘরেই ভিতরে পানি ঢুকে যায়। এতে পায়খানার মলও চলে আসে। এতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।’
এদিকে ১৯ টির বাড়ির মধ্যে ৪ টি তালা বন্ধ হয়ে রয়েছে। কে বা কারা থাকে তা সঠিক যানা যায়নি। অন্য উপকারভোগীরা বলছেন এ বাড়িগুলোতে কে বা কারা নিয়েছেন তারা জানেন না। তারা তেমন আসেন না। মাঝে মাঝে আসলেও ১০-২০ মিনিট থেকে ফের চলে যান।
জানতে চাইলে গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমা খাতুন মোবাইল ফোনে জানান, ‘উপকারভোগীরা থাকেনা এমন না। অনেকজন আছেন যারা কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকায় থাকেন। আর দুই-তিন মাস পরে তারা বাসাই চলে আসেন। আর বৃষ্টির সময় ঘরে পানি পড়ে বিষয়টি আমার জানা নেই। এক সময় খোঁজ নিব। এ বলেই তিনি ফোন কেটে দেন বিস্তারিত আরও জানতে আবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।’