আপেল বসুনীয়া, চিলাহাটি ওয়েব : মৌলিক চাহিদা সকলেরই রয়েছে। বাঁচার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং শিক্ষা অবশ্যই প্রয়োজন। যার এই চাহিদা গুলোর একটিও অপূর্ন থাকে, সে শির উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। আমাদের দেশে অধিকাংশরই এই মৌলিক চাহিদা গুলো মেটানোর সার্থ নেই। তাইতো আজ আমারা ভদ্রা সনে নেই।
যে বয়সে বাবা-মায়ের আদর আল্লাদ পেয়ে নিশ্চিতমনে হাসি আনন্দে লেখাপড়া করার কথা সে বয়সে সে বাঁচার তাগিদে উচ্চ শিক্ষার আকাঙ্খায় রেলওয়ে ষ্টেশনে ট্রেনে জারে করে চকলেট বিক্রি করে পার্বতীপুর থেকে চিলাহাটি, কখন বিরামপুর থেকে পার্বতীপুর । জীবন যুদ্ধে এক উদ্দীয়মান সৈনিক হিসাবে সে বাঁচতে চায়। আমরা এমনি একজন জীবন সংগ্রামি সৈনিকের প্রতিবেদন তুলে ধরছি।
নাম মনিকা, বয়স ১৩, পড়ে সপ্তম শ্রেণীতে। বাবা মনির মিয়া অন্যত্র বিয়ে করে নিরুদ্দেশ। মা রুবিনা বেগম মানুষের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে। অবসর পেলে মা-মেয়ে দুইজনে চকলেট বিক্রি করে। ছোট একটি ভাই বয়স চার বছর ।
দুরারোগ্য টিওপি ব্যধিতে ভুগছে। বাম পাজরের তিনটি হাড় নেই। আর ডান পাজরের তিনটি হাড় ফুঁটো হয়ে গেছে। বাড়ী পার্বতীপুর রেলওয়ে ষ্টেশনের বসতিপাড়ায়। ঘর বলতে প্লাষ্টিক মোড়ানো যাযাবরদের ঘরের ন্যায় তাতেই চলে ওদের ঘর কন্যার কাজ।
অনেক কষ্টের সংসার। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে ওদের। মা মানুষের বাড়ীতে কাজ করে যা পায় তা দিয়ে খাওয়া ও ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার খরচও চলে না। আর সে চকলেট বিক্রি করে যা পায় তা দিয়ে নিজের পোশাক আর লেখাপড়ার খরচ জোগান দেয়।
বিদ্যালয়ের সহপাঠি ছেলে-মেয়েরা উপবৃত্তি পায় সরকার কর্তৃক। কিন্তু সেটাও সে পায়না। না পাওয়ার কারন সে জানে না। শুধু জানে সে সমাজের বৈষম্য তার কারনেই হয়তো সরকারী এই অনুদান থেকে বঞ্চিত। অথবা কোন ব্যক্তি স্বার্থে তাকে বঞ্চিত করেছে। সে মুক্তিযোদ্ধা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেকের ভাষ্য অনুসারে- মনিকা ভাল ছাত্রী আবার ক্লাশও নিয়মিত করে।
তেল বিহিন বাঁতি যেমন জ্বলে টিপ টিপ করে তেমনি ওদের জীবন যাত্রাও চলছে মন্থর গতিতে।
সমাজের সমাজপতিরা সমাজের মানুষকে শুধু শাসনেই করতে পারে। কিন্তু ভাল কাজে এগিয়ে আসতে ভয় পায়। কারণ, স্বার্থত্যাগী মানুষ ঐ সমাজে কম বললেও চলে।
অবশেষে শরৎ বাবু “মহেশ অবলম্বনে বলতে হয়- ওদের আছে, তুব তারা দেয়না-------”। এমতাবস্তায় “চিলাহাটি ওয়েব” সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে তার পাশে দাড়িয়েছে। আমরা আশা করছি সমাজের অনেকেই আছেন যারা এই দুস্থ মানবতার সেবায় এগিয়ে আসবেন। কেননা মানুষ মানুষের জন্যই।